লূক 16
16
একজন অসৎ কর্মচারী
(মথি 5:31,32; 11:12,13; মার্ক 10:11,12)
1যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “কোন এক ধনী লোকের প্রধান কর্মচারীকে এই বলে দোষ দেওয়া হল যে, সে তার মনিবের ধন-সম্পত্তি নষ্ট করছে। 2তখন ধনী লোকটি তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার সম্বন্ধে আমি এ কি শুনছি? তোমার কাজের হিসাব দাও, কারণ তুমি আর প্রধান কর্মচারী থাকতে পারবে না।’
3“তখন সেই কর্মচারী মনে মনে বলল, ‘আমি এখন কি করি? আমার মনিব তো আমাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দিচ্ছেন। মাটি কাটবার শক্তি আমার নেই, আবার ভিক্ষা করতেও লজ্জা লাগে। 4যা হোক, চাকরি থেকে বরখাস্ত হলে পর লোকে যাতে আমাকে তাদের বাড়ীতে থাকতে দেয় সেইজন্য আমি কি করব তা আমি জানি।’
5“এই বলে যারা তার মনিবের কাছে ধার করেছিল তাদের প্রত্যেককে সে ডাকল। তারপর সে প্রথম জনকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আমার মনিবের কাছে তোমার ধার কত?’ 6সে বলল, ‘দু’হাজার চারশো লিটার তেল।’ সেই কর্মচারী তাকে বলল, ‘যে কাগজে তোমার ধারের কথা লেখা আছে সেটা নাও এবং শীঘ্র বসে এক হাজার দু’শো লেখ।’ 7সেই কর্মচারী তারপর আর একজনকে বলল, ‘তোমার ধার কত?’ সে বলল, ‘আঠারো টন গম।’ কর্মচারীটি বলল, ‘তোমার কাগজে সাড়ে চৌদ্দ টন লেখ।’ 8সেই কর্মচারী অসৎ হলেও বুদ্ধি করে কাজ করল বলে মনিব তার প্রশংসা করলেন।
এতে বুঝা যায় যে, এই জগতের লোকেরা নিজেদের মত লোকদের সংগে আচার-ব্যবহারে আলোর রাজ্যের লোকদের চেয়ে বেশী বুদ্ধিমান। 9আমি তোমাদের বলছি, এই মন্দ জগতের ধন দ্বারা লোকদের সংগে বন্ধুত্ব কর, যেন সেই ধন ফুরিয়ে গেলে পর চিরকালের থাকবার জায়গায় তোমাদের গ্রহণ করা হয়। 10সামান্য ব্যাপারে যে বিশ্বাসযোগ্য সে বড় ব্যাপারেও বিশ্বাসযোগ্য হয়। সামান্য ব্যাপারে যাকে বিশ্বাস করা যায় না তাকে বড় ব্যাপারেও বিশ্বাস করা যায় না। 11এই জগতের ধন-সম্পত্তির ব্যাপারে যদি তোমাদের বিশ্বাস করা না যায় তবে কে তোমাদের বিশ্বাস করে আসল ধন দেবে? 12অন্যের অধিকারে যা আছে তা ব্যবহার করবার ব্যাপারে যদি তোমাদের বিশ্বাস করা না যায়, তবে তোমাদের নিজেদের অধিকারের জন্য কেউ কি তোমাদের কিছু দেবে?
13“কোন দাস দু’জন কর্তার সেবা করতে পারে না, কারণ সে একজনকে ঘৃণা করবে ও অন্যজনকে ভালবাসবে, কিম্বা সে একজনের প্রতি মনোযোগ দেবে ও অন্যজনকে তুচ্ছ করবে। ঈশ্বর ও ধন-সম্পত্তি এই দু’য়েরই সেবা তোমরা একসংগে করতে পার না।”
14এই সব কথা শুনে ফরীশীরা যীশুকে ঠাট্টা করতে লাগলেন, কারণ তারা টাকা-পয়সা বেশী ভালবাসতেন। 15তখন যীশু তাঁদের বললেন, “আপনারা লোকদের সামনে নিজেদের ধার্মিক দেখিয়ে থাকেন, কিন্তু ঈশ্বর আপনাদের মনের অবস্থা জানেন। মানুষ যা সম্মানিত মনে করে ঈশ্বরের চোখে তা ঘৃণার যোগ্য।
16“বাপ্তিস্মদাতা যোহনের সময় পর্যন্ত মোশির আইন-কানুন এবং নবীদের লেখা চলত। তারপর থেকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুখবর প্রচার করা হচ্ছে এবং সবাই আগ্রহী হয়ে জোরের সংগে সেই রাজ্যে ঢুকছে। 17তবে আইন-কানুনের একটা বিন্দু বাদ পড়বার চেয়ে বরং আকাশ ও পৃথিবী শেষ হওয়া সহজ।
18“যে কেউ নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে আর একজনকে বিয়ে করে সে ব্যভিচার করে। স্বামী যাকে ছেড়ে দিয়েছে সেই রকম স্ত্রীকে যে বিয়ে করে সেও ব্যভিচার করে।
লাসার ও একজন ধনী লোক
19“একজন ধনী লোক ছিল। সে বেগুনে কাপড় ও অন্যান্য দামী দামী কাপড়-চোপড় পরত। প্রত্যেক দিন খুব জাঁকজমকের সংগে সে আমোদ- প্রমোদ করত। 20সেই ধনী লোকের দরজার কাছে লাসার নামে একজন ভিখারীকে প্রায়ই এনে রাখা হত। লাসারের সারা গায়ে ঘা ছিল। 21সেই ধনী লোকের টেবিল থেকে যে খাবার পড়ত তা-ই খেয়ে সে পেট ভরাতে চাইত, আর কুকুরেরা তার ঘা চেটে দিত।
22“একদিন সেই ভিখারীটি মারা গেল। তখন স্বর্গদূতেরা এসে তাকে অব্রাহামের কাছে নিয়ে গেলেন। তারপর একদিন সেই ধনী লোকটিও মারা গেল এবং তাকে কবর দেওয়া হল। 23মৃতস্থানে খুব যন্ত্রণার মধ্যে থেকে সে উপরের দিকে তাকাল এবং দূর থেকে অব্রাহাম ও তাঁর পাশে লাসারকে দেখতে পেল। 24তখন সে চিৎকার করে বলল, ‘পিতা অব্রাহাম, আমাকে দয়া করুন। লাসারকে পাঠিয়ে দিন যেন সে তার আংগুলের আগাটা জলে ডুবিয়ে আমার জিভ্ ঠাণ্ডা করে। এই আগুনের মধ্যে আমি বড়ই কষ্ট পাচ্ছি।’
25“কিন্তু অব্রাহাম বললেন, ‘মনে করে দেখ, তুমি যখন বেঁচে ছিলে তখন কত সুখ ভোগ করেছ আর লাসার কত কষ্ট ভোগ করেছে। কিন্তু এখন সে এখানে সান্ত্বনা পাচ্ছে আর তুমি কষ্ট পাচ্ছ। 26এছাড়া তোমাদের ও আমাদের মধ্যে এমন একটা বিরাট ফাঁক রয়েছে যাতে ইচ্ছা করলেও কেউ এখান থেকে পার হয়ে তোমাদের কাছে যেতে না পারে এবং ওখান থেকে পার হয়ে আমাদের কাছে আসতে না পারে।’
27“তখন সেই ধনী লোকটি বলল, ‘তাহলে পিতা, দয়া করে লাসারকে আমার বাবার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিন, 28যেন সে আমার পাঁচটি ভাইকে সাবধান করতে পারে; তা না হলে তারাও তো এই যন্ত্রণার জায়গায় আসবে।’
29“কিন্তু অব্রাহাম বললেন, ‘মোশি ও নবীদের লেখা বই তো তাদের কাছে আছে। ওরা তাঁদের কথায় মনোযোগ দিক।’
30“সেই ধনী লোকটি বলল, ‘না, না, পিতা অব্রাহাম, মৃতদের মধ্য থেকে কেউ তাদের কাছে গেলে তারা পাপ থেকে মন ফিরাবে।’
31“তখন অব্রাহাম বললেন, ‘মোশি ও নবীদের কথা যদি তারা না শোনে তবে মৃতদের মধ্য থেকে কেউ উঠলেও তারা বিশ্বাস করবে না।”
Currently Selected:
লূক 16: SBCL
Highlight
Share
Copy
Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in
© The Bangladesh Bible Society, 2000
লূক 16
16
একজন অসৎ কর্মচারী
(মথি 5:31,32; 11:12,13; মার্ক 10:11,12)
1যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “কোন এক ধনী লোকের প্রধান কর্মচারীকে এই বলে দোষ দেওয়া হল যে, সে তার মনিবের ধন-সম্পত্তি নষ্ট করছে। 2তখন ধনী লোকটি তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার সম্বন্ধে আমি এ কি শুনছি? তোমার কাজের হিসাব দাও, কারণ তুমি আর প্রধান কর্মচারী থাকতে পারবে না।’
3“তখন সেই কর্মচারী মনে মনে বলল, ‘আমি এখন কি করি? আমার মনিব তো আমাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দিচ্ছেন। মাটি কাটবার শক্তি আমার নেই, আবার ভিক্ষা করতেও লজ্জা লাগে। 4যা হোক, চাকরি থেকে বরখাস্ত হলে পর লোকে যাতে আমাকে তাদের বাড়ীতে থাকতে দেয় সেইজন্য আমি কি করব তা আমি জানি।’
5“এই বলে যারা তার মনিবের কাছে ধার করেছিল তাদের প্রত্যেককে সে ডাকল। তারপর সে প্রথম জনকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আমার মনিবের কাছে তোমার ধার কত?’ 6সে বলল, ‘দু’হাজার চারশো লিটার তেল।’ সেই কর্মচারী তাকে বলল, ‘যে কাগজে তোমার ধারের কথা লেখা আছে সেটা নাও এবং শীঘ্র বসে এক হাজার দু’শো লেখ।’ 7সেই কর্মচারী তারপর আর একজনকে বলল, ‘তোমার ধার কত?’ সে বলল, ‘আঠারো টন গম।’ কর্মচারীটি বলল, ‘তোমার কাগজে সাড়ে চৌদ্দ টন লেখ।’ 8সেই কর্মচারী অসৎ হলেও বুদ্ধি করে কাজ করল বলে মনিব তার প্রশংসা করলেন।
এতে বুঝা যায় যে, এই জগতের লোকেরা নিজেদের মত লোকদের সংগে আচার-ব্যবহারে আলোর রাজ্যের লোকদের চেয়ে বেশী বুদ্ধিমান। 9আমি তোমাদের বলছি, এই মন্দ জগতের ধন দ্বারা লোকদের সংগে বন্ধুত্ব কর, যেন সেই ধন ফুরিয়ে গেলে পর চিরকালের থাকবার জায়গায় তোমাদের গ্রহণ করা হয়। 10সামান্য ব্যাপারে যে বিশ্বাসযোগ্য সে বড় ব্যাপারেও বিশ্বাসযোগ্য হয়। সামান্য ব্যাপারে যাকে বিশ্বাস করা যায় না তাকে বড় ব্যাপারেও বিশ্বাস করা যায় না। 11এই জগতের ধন-সম্পত্তির ব্যাপারে যদি তোমাদের বিশ্বাস করা না যায় তবে কে তোমাদের বিশ্বাস করে আসল ধন দেবে? 12অন্যের অধিকারে যা আছে তা ব্যবহার করবার ব্যাপারে যদি তোমাদের বিশ্বাস করা না যায়, তবে তোমাদের নিজেদের অধিকারের জন্য কেউ কি তোমাদের কিছু দেবে?
13“কোন দাস দু’জন কর্তার সেবা করতে পারে না, কারণ সে একজনকে ঘৃণা করবে ও অন্যজনকে ভালবাসবে, কিম্বা সে একজনের প্রতি মনোযোগ দেবে ও অন্যজনকে তুচ্ছ করবে। ঈশ্বর ও ধন-সম্পত্তি এই দু’য়েরই সেবা তোমরা একসংগে করতে পার না।”
14এই সব কথা শুনে ফরীশীরা যীশুকে ঠাট্টা করতে লাগলেন, কারণ তারা টাকা-পয়সা বেশী ভালবাসতেন। 15তখন যীশু তাঁদের বললেন, “আপনারা লোকদের সামনে নিজেদের ধার্মিক দেখিয়ে থাকেন, কিন্তু ঈশ্বর আপনাদের মনের অবস্থা জানেন। মানুষ যা সম্মানিত মনে করে ঈশ্বরের চোখে তা ঘৃণার যোগ্য।
16“বাপ্তিস্মদাতা যোহনের সময় পর্যন্ত মোশির আইন-কানুন এবং নবীদের লেখা চলত। তারপর থেকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুখবর প্রচার করা হচ্ছে এবং সবাই আগ্রহী হয়ে জোরের সংগে সেই রাজ্যে ঢুকছে। 17তবে আইন-কানুনের একটা বিন্দু বাদ পড়বার চেয়ে বরং আকাশ ও পৃথিবী শেষ হওয়া সহজ।
18“যে কেউ নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে আর একজনকে বিয়ে করে সে ব্যভিচার করে। স্বামী যাকে ছেড়ে দিয়েছে সেই রকম স্ত্রীকে যে বিয়ে করে সেও ব্যভিচার করে।
লাসার ও একজন ধনী লোক
19“একজন ধনী লোক ছিল। সে বেগুনে কাপড় ও অন্যান্য দামী দামী কাপড়-চোপড় পরত। প্রত্যেক দিন খুব জাঁকজমকের সংগে সে আমোদ- প্রমোদ করত। 20সেই ধনী লোকের দরজার কাছে লাসার নামে একজন ভিখারীকে প্রায়ই এনে রাখা হত। লাসারের সারা গায়ে ঘা ছিল। 21সেই ধনী লোকের টেবিল থেকে যে খাবার পড়ত তা-ই খেয়ে সে পেট ভরাতে চাইত, আর কুকুরেরা তার ঘা চেটে দিত।
22“একদিন সেই ভিখারীটি মারা গেল। তখন স্বর্গদূতেরা এসে তাকে অব্রাহামের কাছে নিয়ে গেলেন। তারপর একদিন সেই ধনী লোকটিও মারা গেল এবং তাকে কবর দেওয়া হল। 23মৃতস্থানে খুব যন্ত্রণার মধ্যে থেকে সে উপরের দিকে তাকাল এবং দূর থেকে অব্রাহাম ও তাঁর পাশে লাসারকে দেখতে পেল। 24তখন সে চিৎকার করে বলল, ‘পিতা অব্রাহাম, আমাকে দয়া করুন। লাসারকে পাঠিয়ে দিন যেন সে তার আংগুলের আগাটা জলে ডুবিয়ে আমার জিভ্ ঠাণ্ডা করে। এই আগুনের মধ্যে আমি বড়ই কষ্ট পাচ্ছি।’
25“কিন্তু অব্রাহাম বললেন, ‘মনে করে দেখ, তুমি যখন বেঁচে ছিলে তখন কত সুখ ভোগ করেছ আর লাসার কত কষ্ট ভোগ করেছে। কিন্তু এখন সে এখানে সান্ত্বনা পাচ্ছে আর তুমি কষ্ট পাচ্ছ। 26এছাড়া তোমাদের ও আমাদের মধ্যে এমন একটা বিরাট ফাঁক রয়েছে যাতে ইচ্ছা করলেও কেউ এখান থেকে পার হয়ে তোমাদের কাছে যেতে না পারে এবং ওখান থেকে পার হয়ে আমাদের কাছে আসতে না পারে।’
27“তখন সেই ধনী লোকটি বলল, ‘তাহলে পিতা, দয়া করে লাসারকে আমার বাবার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিন, 28যেন সে আমার পাঁচটি ভাইকে সাবধান করতে পারে; তা না হলে তারাও তো এই যন্ত্রণার জায়গায় আসবে।’
29“কিন্তু অব্রাহাম বললেন, ‘মোশি ও নবীদের লেখা বই তো তাদের কাছে আছে। ওরা তাঁদের কথায় মনোযোগ দিক।’
30“সেই ধনী লোকটি বলল, ‘না, না, পিতা অব্রাহাম, মৃতদের মধ্য থেকে কেউ তাদের কাছে গেলে তারা পাপ থেকে মন ফিরাবে।’
31“তখন অব্রাহাম বললেন, ‘মোশি ও নবীদের কথা যদি তারা না শোনে তবে মৃতদের মধ্য থেকে কেউ উঠলেও তারা বিশ্বাস করবে না।”
Currently Selected:
:
Highlight
Share
Copy
Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in
© The Bangladesh Bible Society, 2000