আদিপুস্তক 27
27
যাকোব ছলপূর্ব্বক পিতার আশীর্ব্বাদ লন।
1পরে ইস্হাক বৃদ্ধ হইলে চক্ষু নিস্তেজ হওয়ায় আর দেখিতে পাইতেন না; তখন তিনি আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্র এষৌকে ডাকিয়া কহিলেন, বৎস।
2তিনি উত্তর করিলেন, দেখুন, এই আমি। তখন ইস্হাক কহিলেন, দেখ, আমি বৃদ্ধ হইয়াছি; কোন্ দিন আমার মৃত্যু হয়, জানি না। 3এখন বিনয় করি, তোমার শস্ত্র, তোমার তূণ ও ধনুক লইয়া প্রান্তরে যাও, আমার জন্য মৃগ শিকার করিয়া আন। 4আর আমি যেরূপ ভাল বাসি, তদ্রূপ সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করিয়া আমার নিকটে আন, আমি ভোজন করিব; যেন মৃত্যুর পূর্ব্বে আমার প্রাণ তোমাকে আশীর্ব্বাদ করে।
5যখন ইস্হাক আপন পুত্র এষৌকে এই কথা বলেন, তখন রিবিকা তাহা শুনিয়াছিলেন। অতএব এষৌ মৃগ শিকার করিয়া আনিবার জন্য প্রান্তরে গমন করিলে পর রিবিকা আপন পুত্র যাকোবকে কহিলেন, 6দেখ, তোমার ভ্রাতা এষৌকে তোমার পিতা যাহা বলিয়াছেন, আমি শুনিয়াছি; 7তিনি বলিয়াছেন, তুমি আমার জন্য মৃগ শিকার করিয়া আনিয়া সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত কর, তাহাতে আমি ভোজন করিয়া মৃত্যুর পূর্ব্বে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিব। 8হে আমার পুত্র, এখন আমি তোমাকে যাহা আজ্ঞা করি, আমার সেই কথা শুন। 9তুমি পালে গিয়া তথা হইতে উত্তম দুইটী ছাগ-বৎস আন, তোমার পিতা যেরূপ ভাল বাসেন, তদ্রূপ সুস্বাদু খাদ্য আমি প্রস্তুত করিয়া দিই; 10পরে তুমি আপন পিতার নিকটে তাহা লইয়া যাও, তিনি তাহা ভোজন করুন; যেন তিনি মৃত্যুর পূর্ব্বে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করেন।
11তখন যাকোব আপন মাতা রিবিকাকে কহিলেন, দেখ, আমার ভ্রাতা এষৌ লোমশ, কিন্তু আমি নির্লোম। 12কি জানি, পিতা আমাকে স্পর্শ করিবেন, আর আমি তাঁহার দৃষ্টিতে প্রবঞ্চক বলিয়া গণ্য হইব; তাহা হইলে আমি আমার প্রতি আশীর্ব্বাদ না বর্ত্তাইয়া অভিশাপ বর্ত্তাইব।
13কিন্তু তাঁহার মাতা কহিলেন, বৎস, সেই অভিশাপ আমাতেই বর্ত্তুক, কেবল আমার কথা শুন, ছাগ-বৎস লইয়া আইস। 14পরে যাকোব গিয়া তাহা লইয়া মাতার নিকটে আনিলেন, আর তাঁহার পিতা যেরূপ ভাল বাসিতেন, মাতা সেইরূপ সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করিলেন, 15আর ঘরে আপনার কাছে জ্যেষ্ঠ পুত্র এষৌর যে যে মনোহর বস্ত্র ছিল, রিবিকা তাহা লইয়া কনিষ্ঠ পুত্র যাকোবকে পরাইয়া দিলেন। 16আর ঐ দুই ছাগ-বৎসের চর্ম্ম লইয়া তাঁহার হস্তে ও গলদেশের নির্লোম স্থানে জড়াইয়া দিলেন। 17আর তিনি যে সুস্বাদু খাদ্য ও রুটী পাক করিয়াছিলেন, তাহা তাঁহার পুত্র যাকোবের হস্তে দিলেন।
18পরে তিনি আপন পিতার নিকট গিয়া কহিলেন, পিতঃ। তিনি উত্তর করিলেন, দেখ, এই আমি; বৎস তুমি কে?
19যাকোব আপন পিতাকে কহিলেন, আমি আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্র এষৌ; আপনি আমাকে যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তাহা করিয়াছি। বিনয় করি, আপনি উঠিয়া বসিয়া আমার আনীত মৃগমাংস ভোজন করুন, যেন আপনার প্রাণ আমাকে আশীর্ব্বাদ করে।
20তখন ইস্হাক আপন পুত্রকে কহিলেন, বৎস, কেমন করিয়া এত শীঘ্র উহা পাইলে? তিনি কহিলেন, আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু আমার সম্মুখে শুভফল উপস্থিত করিলেন।
21ইস্হাক যাকোবকে কহিলেন, বৎস, নিকটে আইস, আমি তোমাকে স্পর্শ করিয়া বুঝি, তুমি নিশ্চয় আমার পুত্র এষৌ কি না। 22তখন যাকোব আপন পিতা ইস্হাকের নিকটে গেলে তিনি তাঁহাকে স্পর্শ করিয়া কহিলেন, স্বর ত যাকোবের স্বর, কিন্তু হস্ত এষৌর হস্ত। 23বাস্তবিক তিনি তাঁহাকে চিনিতে পারিলেন না, কারণ ভ্রাতা এষৌর হস্তের ন্যায় তাঁহার হস্ত লোমযুক্ত ছিল; অতএব তিনি তাঁহাকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। 24তিনি কহিলেন, তুমি কি নিশ্চয়ই আমার পুত্র এষৌ?
তিনি কহিলেন, হাঁ।
25তখন ইস্হাক কহিলেন, আমার কাছে আন; আমি পুত্রের আনীত মৃগমাংস ভোজন করি, যেন আমার প্রাণ তোমাকে আশীর্ব্বাদ করে। তখন তিনি মাংস আনিলে ইস্হাক ভোজন করিলেন, এবং দ্রাক্ষারস আনিয়া দিলে তাহা পান করিলেন। 26পরে তাঁহার পিতা ইস্হাক কহিলেন, বৎস, বিনয় করি, নিকটে আসিয়া আমাকে চুম্বন কর। 27তখন তিনি নিকটে গিয়া চুম্বন করিলেন, আর ইস্হাক তাঁহার বস্ত্রের গন্ধ লইয়া তাঁহাকে আশীর্ব্বাদ করিয়া কহিলেন, দেখ, আমার পুত্রের সুগন্ধ সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদযুক্ত ক্ষেত্রের সুগন্ধের ন্যায়। 28ঈশ্বর আকাশের শিশির হইতে ও ভূমির সরসতা হইতে তোমাকে দিউন; প্রচুর শস্য ও দ্রাক্ষারস তোমাকে দিউন। 29লোকবৃন্দ তোমার দাস হউক, জাতিগণ তোমার কাছে প্রণিপাত করুক; তুমি আপন জ্ঞাতিদের কর্ত্তা হও, তোমার মাতৃপুত্রেরা তোমার কাছে প্রণিপাত করুক। যে কেহ তোমাকে অভিশাপ দেয়, সে অভিশপ্ত হউক; যে কেহ তোমাকে আশীর্ব্বাদ করে, সে আশীর্ব্বাদযুক্ত হউক।
30ইস্হাক যখন যাকোবের প্রতি আশীর্ব্বাদ শেষ করিলেন, তখন যাকোব আপন পিতা ইস্হাকের সম্মুখ হইতে যাইতে না যাইতেই তাঁহার ভ্রাতা এষৌ মৃগয়া করিয়া ঘরে আসিলেন। 31তিনিও সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করিয়া পিতার নিকটে আনিয়া কহিলেন, পিতঃ আপনি উঠিয়া পুত্রের আনীত মৃগমাংস ভোজন করুন, যেন আপনার প্রাণ আমাকে আশীর্ব্বাদ করে।
32তখন তাঁহার পিতা ইস্হাক কহিলেন, তুমি কে? তিনি কহিলেন, আমি আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্র এষৌ।
33তখন ইস্হাক মহাকম্পনে অতিশয় কম্পিত হইয়া কহিলেন, তবে সে কে, যে মৃগয়া করিয়া আমার নিকটে মৃগমাংস আনিয়াছিল? আমি তোমার আসিবার পূর্ব্বেই তাহা ভোজন করিয়া তাহাকে আশীর্ব্বাদ করিয়াছি, আর সেই আশীর্ব্বাদযুক্ত থাকিবে।
34পিতার এই কথা শুনিবামাত্র এষৌ সাতিশয় ব্যাকুলচিত্তে মহাচিৎকার শব্দ করিতে লাগিলেন, এবং আপন পিতাকে কহিলেন, হে পিতঃ, আমাকে, আমাকেও আশীর্ব্বাদ করুন।
35ইস্হাক কহিলেন, তোমার ভ্রাতা ছল ভাবে আসিয়া তোমার আশীর্ব্বাদ হরণ করিয়াছে।
36এষৌ কহিলেন, তাহার নাম কি যাকোব [বঞ্চক] নয়? বাস্তবিক সে দুই বার আমাকে প্রবঞ্চনা করিয়াছে; সে আমার জ্যেষ্ঠাধিকার হরণ করিয়াছিল, এবং দেখুন, এখন আমার আশীর্ব্বাদও হরণ করিয়াছে। তিনি আবার কহিলেন, আপনি কি আমার জন্য কিছুই আশীর্ব্বাদ রাখেন নাই?
37তখন ইস্হাক উত্তর করিয়া এষৌকে কহিলেন, দেখ, আমি তাহাকে তোমার কর্ত্তা করিয়াছি, এবং তাহার জ্ঞাতি সকলকে তাহারই দাস করিয়াছি, এবং তাহাকে শস্য ও দ্রাক্ষারস দিয়া সবল করিয়াছি; বৎস, এখন তোমার জন্য আর কি করিতে পারি?
38এষৌ আবার আপন পিতাকে কহিলেন, হে পিতঃ আপনার কি কেবল ঐ একটী আশীর্ব্বাদ ছিল? হে পিতঃ আমাকে, আমাকেও আশীর্ব্বাদ করুন। ইহা বলিয়া এষৌ উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন।
39তখন তাঁহার পিতা ইস্হাক উত্তর করিয়া কহিলেন,
দেখ, তোমার বসতি ভূমির সরসতা-
বিহীন হইবে,
উপরিস্থ আকাশের শিশিরবিহীন হইবে।
40তুমি খড়গজীবী এবং আপন ভ্রাতার দাস হইবে; কিন্তু যখন তুমি আস্ফালন করিবে, আপন গ্রীবা হইতে তাহার যোঁয়ালি ভাঙ্গিবে।
যাকোব হারণে যান।
41যাকোব আপন পিতা হইতে আশীর্ব্বাদ পাইয়াছিলেন বলিয়া এষৌ যাকোবকে দ্বেষ করিতে লাগিলেন। আর এষৌ মনে মনে কহিলেন, আমার পিতৃশোকের কাল প্রায় উপস্থিত, তৎপরে আমার ভাই যাকোবকে বধ করিব।
42জ্যেষ্ঠ পুত্র এষৌর এরূপ কথা রিবিকার কর্ণগোচর হইল, তাহাতে তিনি লোক পাঠাইয়া কনিষ্ঠ পুত্র যাকোবকে ডাকাইলেন, কহিলেন, দেখ, তোমার ভ্রাতা এষৌ তোমাকে বধ করিবার আশাতেই মনকে প্রবোধ দিতেছে। 43এখন, হে বৎস, আমার কথা শুন; উঠ, হারণে আমার ভ্রাতা লাবনের নিকট পলাইয়া যাও; 44এবং সেখানে কিছু কাল থাক, যে পর্য্যন্ত তোমার ভ্রাতার ক্রোধ নিবৃত্ত না হয়। 45তোমার প্রতি ভ্রাতার ক্রোধ নিবৃত্ত হইলে, এবং তুমি তাহার প্রতি যাহা করিয়াছ, তাহা সে ভুলিয়া গেলে আমি লোক পাঠাইয়া তথা হইতে তোমাকে আনাইব; এক দিনে তোমাদের দুই জনকেই কেন হারাইব?
46আর রিবিকা ইস্হাককে কহিলেন, এই হিত্তীয়দের কন্যাদের বিষয় আমার প্রাণে ঘৃণা হইতেছে; যদি যাকোবও ইহাদের মত কোন হিত্তীয় কন্যাকে, এতদ্দেশীয় কন্যাদের মধ্যে কোন কন্যাকে বিবাহ করে, তবে প্রাণধারণে আমার কি লাভ?
Currently Selected:
আদিপুস্তক 27: BENGALI-BSI
Highlight
Share
Copy
Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in
Bengali O.V. Bible, পবিএ বাইবেল O.V.
Copyright © 2016 by The Bible Society of India
Used by permission. All rights reserved worldwide.
আদিপুস্তক 27
27
যাকোব ছলপূর্ব্বক পিতার আশীর্ব্বাদ লন।
1পরে ইস্হাক বৃদ্ধ হইলে চক্ষু নিস্তেজ হওয়ায় আর দেখিতে পাইতেন না; তখন তিনি আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্র এষৌকে ডাকিয়া কহিলেন, বৎস।
2তিনি উত্তর করিলেন, দেখুন, এই আমি। তখন ইস্হাক কহিলেন, দেখ, আমি বৃদ্ধ হইয়াছি; কোন্ দিন আমার মৃত্যু হয়, জানি না। 3এখন বিনয় করি, তোমার শস্ত্র, তোমার তূণ ও ধনুক লইয়া প্রান্তরে যাও, আমার জন্য মৃগ শিকার করিয়া আন। 4আর আমি যেরূপ ভাল বাসি, তদ্রূপ সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করিয়া আমার নিকটে আন, আমি ভোজন করিব; যেন মৃত্যুর পূর্ব্বে আমার প্রাণ তোমাকে আশীর্ব্বাদ করে।
5যখন ইস্হাক আপন পুত্র এষৌকে এই কথা বলেন, তখন রিবিকা তাহা শুনিয়াছিলেন। অতএব এষৌ মৃগ শিকার করিয়া আনিবার জন্য প্রান্তরে গমন করিলে পর রিবিকা আপন পুত্র যাকোবকে কহিলেন, 6দেখ, তোমার ভ্রাতা এষৌকে তোমার পিতা যাহা বলিয়াছেন, আমি শুনিয়াছি; 7তিনি বলিয়াছেন, তুমি আমার জন্য মৃগ শিকার করিয়া আনিয়া সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত কর, তাহাতে আমি ভোজন করিয়া মৃত্যুর পূর্ব্বে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিব। 8হে আমার পুত্র, এখন আমি তোমাকে যাহা আজ্ঞা করি, আমার সেই কথা শুন। 9তুমি পালে গিয়া তথা হইতে উত্তম দুইটী ছাগ-বৎস আন, তোমার পিতা যেরূপ ভাল বাসেন, তদ্রূপ সুস্বাদু খাদ্য আমি প্রস্তুত করিয়া দিই; 10পরে তুমি আপন পিতার নিকটে তাহা লইয়া যাও, তিনি তাহা ভোজন করুন; যেন তিনি মৃত্যুর পূর্ব্বে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করেন।
11তখন যাকোব আপন মাতা রিবিকাকে কহিলেন, দেখ, আমার ভ্রাতা এষৌ লোমশ, কিন্তু আমি নির্লোম। 12কি জানি, পিতা আমাকে স্পর্শ করিবেন, আর আমি তাঁহার দৃষ্টিতে প্রবঞ্চক বলিয়া গণ্য হইব; তাহা হইলে আমি আমার প্রতি আশীর্ব্বাদ না বর্ত্তাইয়া অভিশাপ বর্ত্তাইব।
13কিন্তু তাঁহার মাতা কহিলেন, বৎস, সেই অভিশাপ আমাতেই বর্ত্তুক, কেবল আমার কথা শুন, ছাগ-বৎস লইয়া আইস। 14পরে যাকোব গিয়া তাহা লইয়া মাতার নিকটে আনিলেন, আর তাঁহার পিতা যেরূপ ভাল বাসিতেন, মাতা সেইরূপ সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করিলেন, 15আর ঘরে আপনার কাছে জ্যেষ্ঠ পুত্র এষৌর যে যে মনোহর বস্ত্র ছিল, রিবিকা তাহা লইয়া কনিষ্ঠ পুত্র যাকোবকে পরাইয়া দিলেন। 16আর ঐ দুই ছাগ-বৎসের চর্ম্ম লইয়া তাঁহার হস্তে ও গলদেশের নির্লোম স্থানে জড়াইয়া দিলেন। 17আর তিনি যে সুস্বাদু খাদ্য ও রুটী পাক করিয়াছিলেন, তাহা তাঁহার পুত্র যাকোবের হস্তে দিলেন।
18পরে তিনি আপন পিতার নিকট গিয়া কহিলেন, পিতঃ। তিনি উত্তর করিলেন, দেখ, এই আমি; বৎস তুমি কে?
19যাকোব আপন পিতাকে কহিলেন, আমি আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্র এষৌ; আপনি আমাকে যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তাহা করিয়াছি। বিনয় করি, আপনি উঠিয়া বসিয়া আমার আনীত মৃগমাংস ভোজন করুন, যেন আপনার প্রাণ আমাকে আশীর্ব্বাদ করে।
20তখন ইস্হাক আপন পুত্রকে কহিলেন, বৎস, কেমন করিয়া এত শীঘ্র উহা পাইলে? তিনি কহিলেন, আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু আমার সম্মুখে শুভফল উপস্থিত করিলেন।
21ইস্হাক যাকোবকে কহিলেন, বৎস, নিকটে আইস, আমি তোমাকে স্পর্শ করিয়া বুঝি, তুমি নিশ্চয় আমার পুত্র এষৌ কি না। 22তখন যাকোব আপন পিতা ইস্হাকের নিকটে গেলে তিনি তাঁহাকে স্পর্শ করিয়া কহিলেন, স্বর ত যাকোবের স্বর, কিন্তু হস্ত এষৌর হস্ত। 23বাস্তবিক তিনি তাঁহাকে চিনিতে পারিলেন না, কারণ ভ্রাতা এষৌর হস্তের ন্যায় তাঁহার হস্ত লোমযুক্ত ছিল; অতএব তিনি তাঁহাকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। 24তিনি কহিলেন, তুমি কি নিশ্চয়ই আমার পুত্র এষৌ?
তিনি কহিলেন, হাঁ।
25তখন ইস্হাক কহিলেন, আমার কাছে আন; আমি পুত্রের আনীত মৃগমাংস ভোজন করি, যেন আমার প্রাণ তোমাকে আশীর্ব্বাদ করে। তখন তিনি মাংস আনিলে ইস্হাক ভোজন করিলেন, এবং দ্রাক্ষারস আনিয়া দিলে তাহা পান করিলেন। 26পরে তাঁহার পিতা ইস্হাক কহিলেন, বৎস, বিনয় করি, নিকটে আসিয়া আমাকে চুম্বন কর। 27তখন তিনি নিকটে গিয়া চুম্বন করিলেন, আর ইস্হাক তাঁহার বস্ত্রের গন্ধ লইয়া তাঁহাকে আশীর্ব্বাদ করিয়া কহিলেন, দেখ, আমার পুত্রের সুগন্ধ সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদযুক্ত ক্ষেত্রের সুগন্ধের ন্যায়। 28ঈশ্বর আকাশের শিশির হইতে ও ভূমির সরসতা হইতে তোমাকে দিউন; প্রচুর শস্য ও দ্রাক্ষারস তোমাকে দিউন। 29লোকবৃন্দ তোমার দাস হউক, জাতিগণ তোমার কাছে প্রণিপাত করুক; তুমি আপন জ্ঞাতিদের কর্ত্তা হও, তোমার মাতৃপুত্রেরা তোমার কাছে প্রণিপাত করুক। যে কেহ তোমাকে অভিশাপ দেয়, সে অভিশপ্ত হউক; যে কেহ তোমাকে আশীর্ব্বাদ করে, সে আশীর্ব্বাদযুক্ত হউক।
30ইস্হাক যখন যাকোবের প্রতি আশীর্ব্বাদ শেষ করিলেন, তখন যাকোব আপন পিতা ইস্হাকের সম্মুখ হইতে যাইতে না যাইতেই তাঁহার ভ্রাতা এষৌ মৃগয়া করিয়া ঘরে আসিলেন। 31তিনিও সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করিয়া পিতার নিকটে আনিয়া কহিলেন, পিতঃ আপনি উঠিয়া পুত্রের আনীত মৃগমাংস ভোজন করুন, যেন আপনার প্রাণ আমাকে আশীর্ব্বাদ করে।
32তখন তাঁহার পিতা ইস্হাক কহিলেন, তুমি কে? তিনি কহিলেন, আমি আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্র এষৌ।
33তখন ইস্হাক মহাকম্পনে অতিশয় কম্পিত হইয়া কহিলেন, তবে সে কে, যে মৃগয়া করিয়া আমার নিকটে মৃগমাংস আনিয়াছিল? আমি তোমার আসিবার পূর্ব্বেই তাহা ভোজন করিয়া তাহাকে আশীর্ব্বাদ করিয়াছি, আর সেই আশীর্ব্বাদযুক্ত থাকিবে।
34পিতার এই কথা শুনিবামাত্র এষৌ সাতিশয় ব্যাকুলচিত্তে মহাচিৎকার শব্দ করিতে লাগিলেন, এবং আপন পিতাকে কহিলেন, হে পিতঃ, আমাকে, আমাকেও আশীর্ব্বাদ করুন।
35ইস্হাক কহিলেন, তোমার ভ্রাতা ছল ভাবে আসিয়া তোমার আশীর্ব্বাদ হরণ করিয়াছে।
36এষৌ কহিলেন, তাহার নাম কি যাকোব [বঞ্চক] নয়? বাস্তবিক সে দুই বার আমাকে প্রবঞ্চনা করিয়াছে; সে আমার জ্যেষ্ঠাধিকার হরণ করিয়াছিল, এবং দেখুন, এখন আমার আশীর্ব্বাদও হরণ করিয়াছে। তিনি আবার কহিলেন, আপনি কি আমার জন্য কিছুই আশীর্ব্বাদ রাখেন নাই?
37তখন ইস্হাক উত্তর করিয়া এষৌকে কহিলেন, দেখ, আমি তাহাকে তোমার কর্ত্তা করিয়াছি, এবং তাহার জ্ঞাতি সকলকে তাহারই দাস করিয়াছি, এবং তাহাকে শস্য ও দ্রাক্ষারস দিয়া সবল করিয়াছি; বৎস, এখন তোমার জন্য আর কি করিতে পারি?
38এষৌ আবার আপন পিতাকে কহিলেন, হে পিতঃ আপনার কি কেবল ঐ একটী আশীর্ব্বাদ ছিল? হে পিতঃ আমাকে, আমাকেও আশীর্ব্বাদ করুন। ইহা বলিয়া এষৌ উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন।
39তখন তাঁহার পিতা ইস্হাক উত্তর করিয়া কহিলেন,
দেখ, তোমার বসতি ভূমির সরসতা-
বিহীন হইবে,
উপরিস্থ আকাশের শিশিরবিহীন হইবে।
40তুমি খড়গজীবী এবং আপন ভ্রাতার দাস হইবে; কিন্তু যখন তুমি আস্ফালন করিবে, আপন গ্রীবা হইতে তাহার যোঁয়ালি ভাঙ্গিবে।
যাকোব হারণে যান।
41যাকোব আপন পিতা হইতে আশীর্ব্বাদ পাইয়াছিলেন বলিয়া এষৌ যাকোবকে দ্বেষ করিতে লাগিলেন। আর এষৌ মনে মনে কহিলেন, আমার পিতৃশোকের কাল প্রায় উপস্থিত, তৎপরে আমার ভাই যাকোবকে বধ করিব।
42জ্যেষ্ঠ পুত্র এষৌর এরূপ কথা রিবিকার কর্ণগোচর হইল, তাহাতে তিনি লোক পাঠাইয়া কনিষ্ঠ পুত্র যাকোবকে ডাকাইলেন, কহিলেন, দেখ, তোমার ভ্রাতা এষৌ তোমাকে বধ করিবার আশাতেই মনকে প্রবোধ দিতেছে। 43এখন, হে বৎস, আমার কথা শুন; উঠ, হারণে আমার ভ্রাতা লাবনের নিকট পলাইয়া যাও; 44এবং সেখানে কিছু কাল থাক, যে পর্য্যন্ত তোমার ভ্রাতার ক্রোধ নিবৃত্ত না হয়। 45তোমার প্রতি ভ্রাতার ক্রোধ নিবৃত্ত হইলে, এবং তুমি তাহার প্রতি যাহা করিয়াছ, তাহা সে ভুলিয়া গেলে আমি লোক পাঠাইয়া তথা হইতে তোমাকে আনাইব; এক দিনে তোমাদের দুই জনকেই কেন হারাইব?
46আর রিবিকা ইস্হাককে কহিলেন, এই হিত্তীয়দের কন্যাদের বিষয় আমার প্রাণে ঘৃণা হইতেছে; যদি যাকোবও ইহাদের মত কোন হিত্তীয় কন্যাকে, এতদ্দেশীয় কন্যাদের মধ্যে কোন কন্যাকে বিবাহ করে, তবে প্রাণধারণে আমার কি লাভ?
Currently Selected:
:
Highlight
Share
Copy
Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in
Bengali O.V. Bible, পবিএ বাইবেল O.V.
Copyright © 2016 by The Bible Society of India
Used by permission. All rights reserved worldwide.