আদিপুস্তক 41
41
যোষেফের উন্নতি ও বিবাহ।
1দুই বৎসর পরে ফরৌণ স্বপ্ন দেখিলেন। 2দেখ, তিনি নদীকূলে দাঁড়াইয়া আছেন, আর দেখ, নদী হইতে সাতটা হৃষ্টপুষ্ট সুন্দর গাভী উঠিল, ও খাগড়া বনে চরিতে লাগিল। 3সেগুলির পরে, দেখ, আর সাতটা কৃশ ও বিশ্রী গাভী নদী হইতে উঠিল, ও নদীর তীরে ঐ গাভীদের নিকটে দাঁড়াইল। 4পরে সেই কৃশ বিশ্রী গাভীরা ঐ সাতটা হৃষ্টপুষ্ট সুন্দর গাভীকে খাইয়া ফেলিল। তখন ফরৌণের নিদ্রাভঙ্গ হইল। 5তাহার পরে তিনি নিদ্রিত হইয়া দ্বিতীয় বার স্বপ্ন দেখিলেন; দেখ, এক বোঁটাতে সাতটী স্থূলাকার উত্তম শীষ উঠিল। 6সেগুলির পরে, দেখ, পূর্ব্বীয় বায়ুতে শোষিত অন্য সাতটী ক্ষীণ শীষ উঠিল। 7আর এই ক্ষীণ শীষগুলি ঐ সাতটা স্থূলাকার পূর্ণ শীষ গ্রাস করিল। পরে ফরৌণের নিদ্রাভঙ্গ হইল, আর দেখ, উহা স্বপ্নমাত্র। 8পরে প্রাতঃকালে তাঁহার মন অস্থির হইল; আর তিনি লোক পাঠাইয়া মিসরের সকল মন্ত্রবেত্তা ও তথাকার সকল জ্ঞানীকে ডাকাইলেন; আর ফরৌণ তাঁহাদের কাছে সেই স্বপ্নবৃত্তান্ত কহিলেন, কিন্তু তাঁহাদের মধ্যে কেহই ফরৌণকে তাহার অর্থ বলিতে পারিলেন না।
9তখন প্রধান পানপাত্রবাহক ফরৌণকে নিবেদন করিল, অদ্য আমার দোষ মনে পড়িতেছে। 10ফরৌণ আপন দুই দাসের প্রতি, আমার ও প্রধান মোদকের প্রতি, ক্রোধান্বিত হইয়া আমাদিগকে রক্ষক-সেনাপতির বাটীতে কারাবদ্ধ করিয়াছিলেন। 11আর সে ও আমি এক রাত্রিতে স্বপ্ন দেখিয়াছিলাম; এবং দুই জনের স্বপ্নের দুই প্রকার অর্থ হইল। 12তখন সে স্থানে রক্ষক-সেনাপতির দাস এক জন ইব্রীয় যুবক আমাদের সহিত ছিল; তাহাকে স্বপ্নবৃত্তান্ত কহিলে সে আমাদিগকে তাহার অর্থ বলিল; উভয়েরই স্বপ্নের অর্থ বলিল। 13আর সে আমাদিগকে যেরূপ অর্থ বলিয়াছিল, তদ্রূপই ঘটিল; মহারাজ আমাকে পূর্ব্বপদে নিযুক্ত করিলেন, ও তাহাকে টাঙ্গাইয়া দিলেন।
14তখন ফরৌণ যোষেফকে ডাকিয়া পাঠাইলে লোকেরা কারাকূপ হইতে তাঁহাকে শীঘ্র আনিল। পরে তিনি ক্ষৌরী হইয়া অন্য বস্ত্র পরিধান করিয়া ফরৌণের নিকটে উপস্থিত হইলেন। 15তখন ফরৌণ যোষেফকে কহিলেন, আমি এক স্বপ্ন দেখিয়াছি, তাহার অর্থ করিতে পারে, এমন কেহ নাই। কিন্তু তোমার বিষয়ে আমি শুনিয়াছি যে, তুমি স্বপ্ন শুনিলে অর্থ করিতে পার।
16যোষেফ ফরৌণকে উত্তর করিলেন, তাহা আমার অসাধ্য, ঈশ্বরই ফরৌণকে মঙ্গলযুক্ত উত্তর দিবেন।
17তখন ফরৌণ যোষেফকে কহিলেন, দেখ, আমি স্বপ্নে নদীর তীরে দাঁড়াইয়াছিলাম। 18আর দেখ, নদী হইতে সাতটা হৃষ্টপুষ্ট সুন্দর গাভী উঠিয়া খাগড়া বনে চরিতে লাগিল। 19সেগুলির পরে, দেখ, কৃশ ও অতিশয় বিশ্রী ও শুষ্কাঙ্গ অন্য সাতটা গাভী উঠিল; আমি সমস্ত মিসর দেশে তাদৃশ বিশ্রী গাভী কখনও দেখি নাই। 20আর এই কৃশ ও বিশ্রী গাভীরা সেই পূর্ব্বের হৃষ্টপুষ্ট সাতটা গাভীকে খাইয়া ফেলিল। 21কিন্তু তাহারা ইহাদের উদরস্থ হইলে পর, উদরস্থ যে হইয়াছে, এমন বোধ হইল না, কেননা ইহারা পূর্ব্বকার ন্যায় বিশ্রীই রহিল। 22তখন আমার নিদ্রাভঙ্গ হইল। পরে আমি আর এক স্বপ্ন দেখিলাম; আর দেখ, এক বোঁটায় স্থূলাকার উত্তম সাতটী শীষ উঠিল। 23আর দেখ, সেগুলির পরে ম্লান, ক্ষীণ ও পূর্ব্বীয় বায়ুতে শোষিত সাতটী শীষ উঠিল। 24আর এই ক্ষীণ শীষগুলি সেই উত্তম সাতটী শীষকে গ্রাস করিল। এই স্বপ্ন আমি মন্ত্রবেত্তাদিগকে কহিলাম, কিন্তু কেহই ইহার অর্থ আমাকে বলিতে পারিল না।
25তখন যোষেফ ফরৌণকে বলিলেন, ফরৌণের স্বপ্ন এক; ঈশ্বর যাহা করিতে উদ্যত হইয়াছেন, তাহাই ফরৌণকে জ্ঞাত করিয়াছেন। 26ঐ সাতটী উত্তম গাভী সাত বৎসর, এবং ঐ সাতটী উত্তম শীষও সাত বৎসর; স্বপ্ন এক। 27আর তাহার পশ্চাৎ যে সাতটি কৃশ ও বিশ্রী গাভী উঠিল, তাহারাও সাত বৎসর; এবং পূর্ব্বীয় বায়ুতে শোষিত যে সাতটী কৃশ শীষ উঠিল, তাহা দুর্ভিক্ষের সাত বৎসর হইবে। 28আমি ফরৌণকে ইহাই বলিলাম; ঈশ্বর যাহা করিতে উদ্যত হইয়াছেন, তাহা ফরৌণকে দেখাইয়াছেন। 29দেখুন, সমস্ত মিসর দেশে সাত বৎসর অতিশয় শস্যবাহুল্য হইবে। 30তাহার পরে সাত বৎসর এমন দুর্ভিক্ষ হইবে যে, মিসর দেশে সমস্ত শস্যবাহুল্যের বিস্মৃতি হইবে, এবং সেই দুর্ভিক্ষে দেশ নষ্ট হইবে। 31আর সেই পশ্চাদ্বর্ত্তী দুর্ভিক্ষ প্রযুক্ত দেশে পূর্ব্বকার শস্যবাহুল্যের কথা মনে পড়িবে না; কারণ তাহা অতীব কষ্টকর হইবে। 32আর ফরৌণের নিকটে দুই বার স্বপ্ন দেখাইবার ভাব এই; ঈশ্বর ইহা স্থির করিয়াছেন, এবং ঈশ্বর ইহা শীঘ্র ঘটাইবেন।
33অতএব এখন ফরৌণ এক জন সুবুদ্ধি ও জ্ঞানবান্ পুরুষের চেষ্টা করিয়া তাঁহাকে মিসর দেশের উপরে নিযুক্ত করুন। 34আর ফরৌণ এই কর্ম্ম করুন; দেশে অধ্যক্ষগণ নিযুক্ত করিয়া যে সাত বৎসর শস্যবাহুল্য হইবে, সেই সময়ে মিসর দেশ হইতে শস্যের পঞ্চমাংশ গ্রহণ করুন। 35তাঁহারা সেই আগামী শুভ বৎসরসমূহের ভক্ষ্য সংগ্রহ করুন, ও ফরৌণের অধীনে নগরে নগরে খাদ্যের জন্য শস্য সঞ্চয় করুন, ও রক্ষা করুন। 36এইরূপে মিসর দেশে যে দুর্ভিক্ষ হইবে, সেই দুর্ভিক্ষের সাত বৎসরের নিমিত্ত সেই ভক্ষ্য দেশের জন্য সঞ্চিত থাকিবে, তাহাতে দুর্ভিক্ষে দেশ উচ্ছিন্ন হইবে না।
37তখন ফরৌণের ও তাঁহার সকল দাসের দৃষ্টিতে এই কথা উত্তম বোধ হইল। 38আর ফরৌণ আপন দাসদিগকে কহিলেন, ইহাঁর তুল্য পুরুষ, যাঁহার অন্তরে ঈশ্বরের আত্মা আছেন, এমন আর কাহাকে পাইব? 39তখন ফরৌণ যোষেফকে কহিলেন, ঈশ্বর তোমাকে এই সকল জ্ঞাত করিয়াছেন, অতএব তোমার তুল্য সুবুদ্ধি ও জ্ঞানবান্ কেহই নাই। 40তুমিই আমার বাটীর অধ্যক্ষ হও; আমার সমস্ত প্রজা তোমার বাক্য শিরোধার্য্য করিবে, কেবল সিংহাসনে আমি তোমা হইতে বড় থাকিব। 41ফরৌণ যোষেফকে আরও কহিলেন, দেখ, আমি তোমাকে সমস্ত মিসর দেশের উপরে নিযুক্ত করিলাম। 42পরে ফরৌণ হস্ত হইতে নিজ অঙ্গুরীয় খুলিয়া যোষেফের হস্তে দিলেন, তাঁহাকে কার্পাসের শুভ্র বসন পরিধান করাইলেন, এবং তাঁহার কণ্ঠদেশে সুবর্ণহার দিলেন। 43আর তাঁহাকে আপনার দ্বিতীয় রথে আরোহণ করাইলেন এবং লোকেরা তাঁহার অগ্রে অগ্রে ‘হাঁটু পাত, হাঁটু পাত’ বলিয়া ঘোষণা করিল। এইরূপে তিনি সমস্ত মিসর দেশের অধ্যক্ষপদে নিযুক্ত হইলেন। 44আর ফরৌণ যোষেফকে কহিলেন, আমি ফরৌণ, তোমার আজ্ঞা ব্যতিরেকে সমস্ত মিসর দেশে কোন লোক হাত কি পা তুলিতে পারিবে না। 45আর ফরৌণ যোষেফের নাম সাফনৎ-পানেহ রাখিলেন। এবং তাঁহার সঙ্গে ওন নগর-নিবাসী পোটীফেরঃ নামক যাজকের আসনৎ নাম্নী কন্যার বিবাহ দিলেন। পরে যোষেফ মিসর দেশের মধ্যে যাতায়াত করিতে লাগিলেন। 46যোষেফ ত্রিশ বৎসর বয়সে মিসর-রাজ ফরৌণের সাক্ষাতে দণ্ডায়মান হইয়াছিলেন। পরে যোষেফ ফরৌণের নিকট হইতে প্রস্থান করিয়া মিসর দেশের সর্ব্বত্র ভ্রমণ করিলেন। 47আর সেই শস্যবাহুল্যের সপ্ত বৎসর ভূমিতে অপর্য্যাপ্ত শস্য জন্মিল। 48মিসর দেশে উপস্থিত সেই সপ্ত বৎসরে সকল শস্য সংগ্রহ করিয়া তিনি প্রতিনগরে সঞ্চয় করিলেন; যে নগরের চারি সীমায় যে শস্য হইল, সেই নগরে তাহা সঞ্চয় করিলেন। 49এইরূপে যোষেফ সমুদ্রের বালুকার ন্যায় এমন প্রচুর শস্য সংগ্রহ করিলেন যে, তাহা মাপিতে নিবৃত্ত হইলেন, কেননা তাহা অপরিমেয় ছিল।
50দুর্ভিক্ষ বৎসরের পূর্ব্বে যোষেফের দুই পুত্র জন্মিল; ওন্-নিবাসী পোটীফেরঃ যাজকের কন্যা আসনৎ তাঁহার জন্য তাহাদিগকে প্রসব করিলেন। 51আর যোষেফ তাহাদের জ্যেষ্ঠের নাম মনঃশি [বিস্মৃতিজনক] রাখিলেন, কেননা তিনি কহিলেন, ঈশ্বর আমার সমস্ত ক্লেশের ও আমার সমস্ত পিতৃকুলের বিস্মৃতি জন্মাইয়াছেন। 52পরে দ্বিতীয় পুত্রের নাম ইফ্রয়িম [ফলবান্] রাখিলেন, কেননা তিনি কহিলেন, আমার দুঃখভোগের দেশে ঈশ্বর আমাকে ফলবান্ করিয়াছেন। 53পরে মিসর দেশে উপস্থিত শস্যবাহুল্যের সাত বৎসর শেষ হইল, 54এবং যোষেফ যেমন বলিয়াছিলেন, তদনুসারে দুর্ভিক্ষের সাত বৎসর আরম্ভ হইল। সকল দেশে দুর্ভিক্ষ হইল, কিন্তু সমস্ত মিসর দেশে ভক্ষ্য ছিল। 55পরে সমস্ত মিসর দেশে দুর্ভিক্ষ হইলে প্রজারা ফরৌণের নিকটে ভক্ষ্যের জন্য ক্রন্দন করিল তাহাতে ফরৌণ মিস্রীয়দের সকলকে কহিলেন, তোমরা যোষেফের নিকটে যাও; তিনি তোমাদিগকে যাহা বলেন, তাহাই কর। 56তখন সমস্ত দেশেই দুর্ভিক্ষ হইয়াছিল। আর যোষেফ সকল স্থানের গোলা খুলিয়া মিস্রীয়দের কাছে শস্য বিক্রয় করিতে লাগিলেন; আর মিসর দেশে দুর্ভিক্ষ প্রবল হইয়া উঠিল। 57এবং সর্ব্বদেশীয় লোকে মিসর দেশে যোষেফের নিকটে শস্য ক্রয় করিতে আসিল, কেননা সর্ব্বদেশেই দুর্ভিক্ষ প্রবল হইয়াছিল।
Currently Selected:
আদিপুস্তক 41: BENGALI-BSI
Highlight
Share
Copy
Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in
Bengali O.V. Bible, পবিএ বাইবেল O.V.
Copyright © 2016 by The Bible Society of India
Used by permission. All rights reserved worldwide.
আদিপুস্তক 41
41
যোষেফের উন্নতি ও বিবাহ।
1দুই বৎসর পরে ফরৌণ স্বপ্ন দেখিলেন। 2দেখ, তিনি নদীকূলে দাঁড়াইয়া আছেন, আর দেখ, নদী হইতে সাতটা হৃষ্টপুষ্ট সুন্দর গাভী উঠিল, ও খাগড়া বনে চরিতে লাগিল। 3সেগুলির পরে, দেখ, আর সাতটা কৃশ ও বিশ্রী গাভী নদী হইতে উঠিল, ও নদীর তীরে ঐ গাভীদের নিকটে দাঁড়াইল। 4পরে সেই কৃশ বিশ্রী গাভীরা ঐ সাতটা হৃষ্টপুষ্ট সুন্দর গাভীকে খাইয়া ফেলিল। তখন ফরৌণের নিদ্রাভঙ্গ হইল। 5তাহার পরে তিনি নিদ্রিত হইয়া দ্বিতীয় বার স্বপ্ন দেখিলেন; দেখ, এক বোঁটাতে সাতটী স্থূলাকার উত্তম শীষ উঠিল। 6সেগুলির পরে, দেখ, পূর্ব্বীয় বায়ুতে শোষিত অন্য সাতটী ক্ষীণ শীষ উঠিল। 7আর এই ক্ষীণ শীষগুলি ঐ সাতটা স্থূলাকার পূর্ণ শীষ গ্রাস করিল। পরে ফরৌণের নিদ্রাভঙ্গ হইল, আর দেখ, উহা স্বপ্নমাত্র। 8পরে প্রাতঃকালে তাঁহার মন অস্থির হইল; আর তিনি লোক পাঠাইয়া মিসরের সকল মন্ত্রবেত্তা ও তথাকার সকল জ্ঞানীকে ডাকাইলেন; আর ফরৌণ তাঁহাদের কাছে সেই স্বপ্নবৃত্তান্ত কহিলেন, কিন্তু তাঁহাদের মধ্যে কেহই ফরৌণকে তাহার অর্থ বলিতে পারিলেন না।
9তখন প্রধান পানপাত্রবাহক ফরৌণকে নিবেদন করিল, অদ্য আমার দোষ মনে পড়িতেছে। 10ফরৌণ আপন দুই দাসের প্রতি, আমার ও প্রধান মোদকের প্রতি, ক্রোধান্বিত হইয়া আমাদিগকে রক্ষক-সেনাপতির বাটীতে কারাবদ্ধ করিয়াছিলেন। 11আর সে ও আমি এক রাত্রিতে স্বপ্ন দেখিয়াছিলাম; এবং দুই জনের স্বপ্নের দুই প্রকার অর্থ হইল। 12তখন সে স্থানে রক্ষক-সেনাপতির দাস এক জন ইব্রীয় যুবক আমাদের সহিত ছিল; তাহাকে স্বপ্নবৃত্তান্ত কহিলে সে আমাদিগকে তাহার অর্থ বলিল; উভয়েরই স্বপ্নের অর্থ বলিল। 13আর সে আমাদিগকে যেরূপ অর্থ বলিয়াছিল, তদ্রূপই ঘটিল; মহারাজ আমাকে পূর্ব্বপদে নিযুক্ত করিলেন, ও তাহাকে টাঙ্গাইয়া দিলেন।
14তখন ফরৌণ যোষেফকে ডাকিয়া পাঠাইলে লোকেরা কারাকূপ হইতে তাঁহাকে শীঘ্র আনিল। পরে তিনি ক্ষৌরী হইয়া অন্য বস্ত্র পরিধান করিয়া ফরৌণের নিকটে উপস্থিত হইলেন। 15তখন ফরৌণ যোষেফকে কহিলেন, আমি এক স্বপ্ন দেখিয়াছি, তাহার অর্থ করিতে পারে, এমন কেহ নাই। কিন্তু তোমার বিষয়ে আমি শুনিয়াছি যে, তুমি স্বপ্ন শুনিলে অর্থ করিতে পার।
16যোষেফ ফরৌণকে উত্তর করিলেন, তাহা আমার অসাধ্য, ঈশ্বরই ফরৌণকে মঙ্গলযুক্ত উত্তর দিবেন।
17তখন ফরৌণ যোষেফকে কহিলেন, দেখ, আমি স্বপ্নে নদীর তীরে দাঁড়াইয়াছিলাম। 18আর দেখ, নদী হইতে সাতটা হৃষ্টপুষ্ট সুন্দর গাভী উঠিয়া খাগড়া বনে চরিতে লাগিল। 19সেগুলির পরে, দেখ, কৃশ ও অতিশয় বিশ্রী ও শুষ্কাঙ্গ অন্য সাতটা গাভী উঠিল; আমি সমস্ত মিসর দেশে তাদৃশ বিশ্রী গাভী কখনও দেখি নাই। 20আর এই কৃশ ও বিশ্রী গাভীরা সেই পূর্ব্বের হৃষ্টপুষ্ট সাতটা গাভীকে খাইয়া ফেলিল। 21কিন্তু তাহারা ইহাদের উদরস্থ হইলে পর, উদরস্থ যে হইয়াছে, এমন বোধ হইল না, কেননা ইহারা পূর্ব্বকার ন্যায় বিশ্রীই রহিল। 22তখন আমার নিদ্রাভঙ্গ হইল। পরে আমি আর এক স্বপ্ন দেখিলাম; আর দেখ, এক বোঁটায় স্থূলাকার উত্তম সাতটী শীষ উঠিল। 23আর দেখ, সেগুলির পরে ম্লান, ক্ষীণ ও পূর্ব্বীয় বায়ুতে শোষিত সাতটী শীষ উঠিল। 24আর এই ক্ষীণ শীষগুলি সেই উত্তম সাতটী শীষকে গ্রাস করিল। এই স্বপ্ন আমি মন্ত্রবেত্তাদিগকে কহিলাম, কিন্তু কেহই ইহার অর্থ আমাকে বলিতে পারিল না।
25তখন যোষেফ ফরৌণকে বলিলেন, ফরৌণের স্বপ্ন এক; ঈশ্বর যাহা করিতে উদ্যত হইয়াছেন, তাহাই ফরৌণকে জ্ঞাত করিয়াছেন। 26ঐ সাতটী উত্তম গাভী সাত বৎসর, এবং ঐ সাতটী উত্তম শীষও সাত বৎসর; স্বপ্ন এক। 27আর তাহার পশ্চাৎ যে সাতটি কৃশ ও বিশ্রী গাভী উঠিল, তাহারাও সাত বৎসর; এবং পূর্ব্বীয় বায়ুতে শোষিত যে সাতটী কৃশ শীষ উঠিল, তাহা দুর্ভিক্ষের সাত বৎসর হইবে। 28আমি ফরৌণকে ইহাই বলিলাম; ঈশ্বর যাহা করিতে উদ্যত হইয়াছেন, তাহা ফরৌণকে দেখাইয়াছেন। 29দেখুন, সমস্ত মিসর দেশে সাত বৎসর অতিশয় শস্যবাহুল্য হইবে। 30তাহার পরে সাত বৎসর এমন দুর্ভিক্ষ হইবে যে, মিসর দেশে সমস্ত শস্যবাহুল্যের বিস্মৃতি হইবে, এবং সেই দুর্ভিক্ষে দেশ নষ্ট হইবে। 31আর সেই পশ্চাদ্বর্ত্তী দুর্ভিক্ষ প্রযুক্ত দেশে পূর্ব্বকার শস্যবাহুল্যের কথা মনে পড়িবে না; কারণ তাহা অতীব কষ্টকর হইবে। 32আর ফরৌণের নিকটে দুই বার স্বপ্ন দেখাইবার ভাব এই; ঈশ্বর ইহা স্থির করিয়াছেন, এবং ঈশ্বর ইহা শীঘ্র ঘটাইবেন।
33অতএব এখন ফরৌণ এক জন সুবুদ্ধি ও জ্ঞানবান্ পুরুষের চেষ্টা করিয়া তাঁহাকে মিসর দেশের উপরে নিযুক্ত করুন। 34আর ফরৌণ এই কর্ম্ম করুন; দেশে অধ্যক্ষগণ নিযুক্ত করিয়া যে সাত বৎসর শস্যবাহুল্য হইবে, সেই সময়ে মিসর দেশ হইতে শস্যের পঞ্চমাংশ গ্রহণ করুন। 35তাঁহারা সেই আগামী শুভ বৎসরসমূহের ভক্ষ্য সংগ্রহ করুন, ও ফরৌণের অধীনে নগরে নগরে খাদ্যের জন্য শস্য সঞ্চয় করুন, ও রক্ষা করুন। 36এইরূপে মিসর দেশে যে দুর্ভিক্ষ হইবে, সেই দুর্ভিক্ষের সাত বৎসরের নিমিত্ত সেই ভক্ষ্য দেশের জন্য সঞ্চিত থাকিবে, তাহাতে দুর্ভিক্ষে দেশ উচ্ছিন্ন হইবে না।
37তখন ফরৌণের ও তাঁহার সকল দাসের দৃষ্টিতে এই কথা উত্তম বোধ হইল। 38আর ফরৌণ আপন দাসদিগকে কহিলেন, ইহাঁর তুল্য পুরুষ, যাঁহার অন্তরে ঈশ্বরের আত্মা আছেন, এমন আর কাহাকে পাইব? 39তখন ফরৌণ যোষেফকে কহিলেন, ঈশ্বর তোমাকে এই সকল জ্ঞাত করিয়াছেন, অতএব তোমার তুল্য সুবুদ্ধি ও জ্ঞানবান্ কেহই নাই। 40তুমিই আমার বাটীর অধ্যক্ষ হও; আমার সমস্ত প্রজা তোমার বাক্য শিরোধার্য্য করিবে, কেবল সিংহাসনে আমি তোমা হইতে বড় থাকিব। 41ফরৌণ যোষেফকে আরও কহিলেন, দেখ, আমি তোমাকে সমস্ত মিসর দেশের উপরে নিযুক্ত করিলাম। 42পরে ফরৌণ হস্ত হইতে নিজ অঙ্গুরীয় খুলিয়া যোষেফের হস্তে দিলেন, তাঁহাকে কার্পাসের শুভ্র বসন পরিধান করাইলেন, এবং তাঁহার কণ্ঠদেশে সুবর্ণহার দিলেন। 43আর তাঁহাকে আপনার দ্বিতীয় রথে আরোহণ করাইলেন এবং লোকেরা তাঁহার অগ্রে অগ্রে ‘হাঁটু পাত, হাঁটু পাত’ বলিয়া ঘোষণা করিল। এইরূপে তিনি সমস্ত মিসর দেশের অধ্যক্ষপদে নিযুক্ত হইলেন। 44আর ফরৌণ যোষেফকে কহিলেন, আমি ফরৌণ, তোমার আজ্ঞা ব্যতিরেকে সমস্ত মিসর দেশে কোন লোক হাত কি পা তুলিতে পারিবে না। 45আর ফরৌণ যোষেফের নাম সাফনৎ-পানেহ রাখিলেন। এবং তাঁহার সঙ্গে ওন নগর-নিবাসী পোটীফেরঃ নামক যাজকের আসনৎ নাম্নী কন্যার বিবাহ দিলেন। পরে যোষেফ মিসর দেশের মধ্যে যাতায়াত করিতে লাগিলেন। 46যোষেফ ত্রিশ বৎসর বয়সে মিসর-রাজ ফরৌণের সাক্ষাতে দণ্ডায়মান হইয়াছিলেন। পরে যোষেফ ফরৌণের নিকট হইতে প্রস্থান করিয়া মিসর দেশের সর্ব্বত্র ভ্রমণ করিলেন। 47আর সেই শস্যবাহুল্যের সপ্ত বৎসর ভূমিতে অপর্য্যাপ্ত শস্য জন্মিল। 48মিসর দেশে উপস্থিত সেই সপ্ত বৎসরে সকল শস্য সংগ্রহ করিয়া তিনি প্রতিনগরে সঞ্চয় করিলেন; যে নগরের চারি সীমায় যে শস্য হইল, সেই নগরে তাহা সঞ্চয় করিলেন। 49এইরূপে যোষেফ সমুদ্রের বালুকার ন্যায় এমন প্রচুর শস্য সংগ্রহ করিলেন যে, তাহা মাপিতে নিবৃত্ত হইলেন, কেননা তাহা অপরিমেয় ছিল।
50দুর্ভিক্ষ বৎসরের পূর্ব্বে যোষেফের দুই পুত্র জন্মিল; ওন্-নিবাসী পোটীফেরঃ যাজকের কন্যা আসনৎ তাঁহার জন্য তাহাদিগকে প্রসব করিলেন। 51আর যোষেফ তাহাদের জ্যেষ্ঠের নাম মনঃশি [বিস্মৃতিজনক] রাখিলেন, কেননা তিনি কহিলেন, ঈশ্বর আমার সমস্ত ক্লেশের ও আমার সমস্ত পিতৃকুলের বিস্মৃতি জন্মাইয়াছেন। 52পরে দ্বিতীয় পুত্রের নাম ইফ্রয়িম [ফলবান্] রাখিলেন, কেননা তিনি কহিলেন, আমার দুঃখভোগের দেশে ঈশ্বর আমাকে ফলবান্ করিয়াছেন। 53পরে মিসর দেশে উপস্থিত শস্যবাহুল্যের সাত বৎসর শেষ হইল, 54এবং যোষেফ যেমন বলিয়াছিলেন, তদনুসারে দুর্ভিক্ষের সাত বৎসর আরম্ভ হইল। সকল দেশে দুর্ভিক্ষ হইল, কিন্তু সমস্ত মিসর দেশে ভক্ষ্য ছিল। 55পরে সমস্ত মিসর দেশে দুর্ভিক্ষ হইলে প্রজারা ফরৌণের নিকটে ভক্ষ্যের জন্য ক্রন্দন করিল তাহাতে ফরৌণ মিস্রীয়দের সকলকে কহিলেন, তোমরা যোষেফের নিকটে যাও; তিনি তোমাদিগকে যাহা বলেন, তাহাই কর। 56তখন সমস্ত দেশেই দুর্ভিক্ষ হইয়াছিল। আর যোষেফ সকল স্থানের গোলা খুলিয়া মিস্রীয়দের কাছে শস্য বিক্রয় করিতে লাগিলেন; আর মিসর দেশে দুর্ভিক্ষ প্রবল হইয়া উঠিল। 57এবং সর্ব্বদেশীয় লোকে মিসর দেশে যোষেফের নিকটে শস্য ক্রয় করিতে আসিল, কেননা সর্ব্বদেশেই দুর্ভিক্ষ প্রবল হইয়াছিল।
Currently Selected:
:
Highlight
Share
Copy
Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in
Bengali O.V. Bible, পবিএ বাইবেল O.V.
Copyright © 2016 by The Bible Society of India
Used by permission. All rights reserved worldwide.