YouVersion Logo
Search Icon

যোহন। 6

6
যীশুর আর দুইটী অলৌকিক কার্য্য ও তৎসংক্রান্ত উপদেশ।
1ইহার পরে#মথি 14:13-33।; মার্ক 6:32-51।; লূক 9:10-17। যীশু গালীল-সাগরের, অর্থাৎ তিবিরিয়া-সাগরের, অন্য পারে প্রস্থান করিলেন। 2আর বিস্তর লোক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইতে লাগিল, কেননা তিনি রোগীদের উপরে যে সকল চিহ্নকার্য্য করিতেন, সে সকল তাহারা দেখিত। 3আর যীশু পর্ব্বতে উঠিলেন, এবং সেখানে আপন শিষ্যদের সহিত বসিলেন। 4তখন নিস্তারপর্ব্ব, যিহূদীদের পর্ব্ব, সন্নিকট ছিল। 5আর যীশু চক্ষু তুলিয়া, বিস্তর লোক তাঁহার নিকটে আসিতেছে দেখিয়া, ফিলিপকে বলিলেন, উহাদের আহারার্থে আমরা কোথায় রুটী কিনিতে পাইব? 6এ কথা তিনি তাঁহার পরীক্ষার নিমিত্ত বলিলেন? কেননা কি করিবেন, তাহা তিনি আপনি জানিতেন।
7ফিলিপ তাঁহাকে উত্তর করিলেন, উহাদের জন্য দুই শত সিকির রুটীও এরূপ যথেষ্ট নয় যে, প্রত্যেক জন কিছু কিছু পাইতে পারে।
8তাঁহার শিষ্যদের মধ্যে এক জন, শিমোন পিতরের ভ্রাতা আন্দ্রিয়, 9তাঁহাকে কহিলেন, এখানে একটী বালক আছে, তাহার কাছে যবের পাঁচখানা রুটী এবং দুইটী মাছ আছে; কিন্তু এত লোকের মধ্যে তাহাতে কি হইবে?
10যীশু বলিলেন, লোকদিগকে বসাইয়া দেও। সে স্থানে অনেক ঘাস ছিল। তাহাতে পুরুষেরা, সংখ্যায় অনুমান পাঁচ হাজার লোক, বসিয়া গেল। 11তখন যীশু সেই রুটী কয়খানি লইলেন, ও ধন্যবাদ করিলেন, এবং যাহারা বসিয়াছিল, তাহাদিগকে ভাগ করিয়া দিলেন; সেইরূপে মাছ কয়টী হইতেও, তাহারা যত ইচ্ছা করিল, দিলেন। 12আর তাহারা তৃপ্ত হইলে তিনি আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, অবশিষ্ট গুঁড়াগাঁড়া সকল সংগ্রহ কর, যেন কিছুই নষ্ট না হয়। 13তাহাতে তাঁহারা সংগ্রহ করিলেন, আর ঐ পাঁচখানা যবের রুটীর গুঁড়াগাঁড়ায় সেই লোকদের ভোজনের পর যাহা বাঁচিয়াছিল, তাহাতে বারো ডালা পূর্ণ করিলেন।
14অতএব সেই লোকেরা তাঁহার কৃত চিহ্ন-কার্য্য দেখিয়া বলিতে লাগিল, উনি সত্যই সেই ভাববাদী, যিনি জগতে আসিতেছেন। 15তখন যীশু বুঝিতে পারিলেন যে, তাহারা আসিয়া রাজা করিবার জন্য তাঁহাকে ধরিতে উদ্যত হইয়াছে, তাই আবার নিজে একাকী পর্ব্বতে চলিয়া গেলেন।
16সন্ধ্যা হইলে তাঁহার শিষ্যেরা সমুদ্রতীরে নামিয়া গেলেন, 17এবং একখানি নৌকায় উঠিয়া সমুদ্রপারে কফরনাহূমের দিকে গমন করিতে লাগিলেন। সে সময় অন্ধকার হইয়াছিল, এবং যীশু তখনও তাঁহাদের নিকটে আইসেন নাই। 18আর প্রবল বায়ু প্রবাহিত হওয়ায় সমুদ্রে ঢেউ উঠিয়াছিল। 19এইরূপে দেড় বা দুই ক্রোশ বাহিয়া গেলে পর তাঁহারা যীশুকে দেখিতে পাইলেন, তিনি সমুদ্রের উপর দিয়া হাঁটিয়া নৌকার নিকটে আসিতেছেন; ইহাতে তাঁহারা ভয় পাইলেন। 20কিন্তু তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, এ আমি, ভয় করিও না। 21তখন তাঁহারা তাঁহাকে নৌকাতে গ্রহণ করিতে ইচ্ছুক হইলেন; আর তাঁহারা যেখানে যাইতেছিলেন, নৌকা তৎক্ষণাৎ সেই স্থলে উপস্থিত হইল।
22পর দিন, যে জনসমূহ সমুদ্রের পরপারে দাঁড়াইয়াছিল, তাহারা দেখিয়াছিল যে, সেখানে একখানি বই আর নৌকা নাই, এবং যীশু শিষ্যদের সহিত সেই নৌকাতে উঠেন নাই, কেবল তাঁহার শিষ্যেরা প্রস্থান করিয়াছিলেন। 23—কিন্তু তিবিরিয়া হইতে কয়েকখানি নৌকা, যেখানে প্রভু ধন্যবাদ করিলে লোকেরা রুটী খাইয়াছিল, সেই স্থানের নিকটে আসিয়াছিল। 24—অতএব লোকেরা যখন দেখিল, যীশু সেখানে নাই, তাঁহার শিষ্যেরাও নাই, তখন তাহারা সেই সকল নৌকায় চড়িয়া যীশুর অন্বেষণে কফরনাহূমে আসিল।
25আর সমুদ্রের পারে তাঁহাকে পাইয়া কহিল, রব্বি, আপনি এখানে কখন্‌ আসিয়াছেন?
26যীশু তাহাদিগকে উত্তর করিয়া কহিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা চিহ্ন-কার্য্য দেখিয়াছ বলিয়া আমার অন্বেষণ করিতেছ, তাহা নয়; কিন্তু সেই রুটী খাইয়াছিলে ও তৃপ্ত হইয়াছিলে বলিয়া। 27নশ্বর ভক্ষ্যের নিমিত্ত শ্রম করিও না, কিন্তু সেই ভক্ষ্যের জন্য শ্রম কর, যাহা অনন্ত জীবন পর্য্যন্ত থাকে, যাহা মনুষ্যপুত্র তোমাদিগকে দিবেন, কেননা পিতা —ঈশ্বর—তাঁহাকেই মুদ্রাঙ্কিত করিয়াছেন।
28তখন তাহারা তাঁহাকে কহিল, আমরা যেন ঈশ্বরের কার্য্য করিতে পারি, এ জন্য আমাদিগকে কি করিতে হইবে?
29যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, ঈশ্বরের কার্য্য এই, যেন তাঁহাতে তোমরা বিশ্বাস কর, যাঁহাকে তিনি প্রেরণ করিয়াছেন।
30তাহারা তাঁহাকে কহিল, ভাল, আপনি এমন কি চিহ্ন-কার্য্য করিতেছেন, যাহা দেখিয়া আমরা আপনাকে বিশ্বাস করিব? আপনি কি কার্য্য করিতেছেন? 31আমাদের পিতৃপুরুষেরা প্রান্তরে মান্না খাইয়াছিলেন, যেমন লেখা আছে, “তিনি ভোজনের জন্য তাহাদিগকে স্বর্গ হইতে খাদ্য দিলেন।”#যাত্রা 16:13,14।; গীত 78:24।
32যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, মোশি তোমাদিগকে স্বর্গ হইতে সেই খাদ্য দেন নাই, কিন্তু আমার পিতাই তোমাদিগকে স্বর্গ হইতে প্রকৃত খাদ্য দেন। 33কেননা ঈশ্বরীয় খাদ্য তাহাই, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আইসে, ও জগৎকে জীবন দান করে।
34তখন তাহারা তাঁহাকে কহিল, প্রভু, চিরকাল সেই খাদ্য আমাদিগকে দিউন।
35যীশু তাহাদিগকে বলিলেন, আমিই সেই জীবন-খাদ্য। যে ব্যক্তি আমার কাছে আইসে, সে ক্ষুধার্ত্ত হইবে না, এবং যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে তৃষ্ণার্ত্ত হইবে না, কখনও না। 36কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিয়াছি যে, তোমরা আমাকে দেখিয়াছ, আর বিশ্বাস কর না। 37পিতা যে সমস্ত আমাকে দেন, সে সমস্ত আমারই কাছে আসিবে; এবং যে আমার কাছে আসিবে, তাহাকে আমি কোন মতে বাহিরে ফেলিয়া দিব না। 38কেননা আমার ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য আমি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসি নাই; কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহারই ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য। 39আর যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার ইচ্ছা এই, তিনি আমাকে যে সমস্ত দিয়াছেন, তাহার কিছুই যেন না হারাই, কিন্তু শেষ দিনে যেন তাহা উঠাই। 40কারণ আমার পিতার ইচ্ছা এই, যে কেহ পুত্রকে দর্শন করে ও তাঁহাকে বিশ্বাস করে, সে যেন অনন্ত জীবন পায়; আর আমিই তাহাকে শেষ দিনে উঠাইব।
41অতএব যিহূদীরা তাঁহার বিষয়ে বচসা করিতে লাগিল, কেননা তিনি বলিয়াছিলেন, আমিই সেই খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছে। 42তাহারা বলিল, এ কি যোষেফের পুত্র সেই যীশু নয়, যাহার পিতা মাতাকে আমরা জানি? এখন এ কেমন করিয়া বলে, আমি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছি?
43যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা পরস্পর বচসা করিও না। 44পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আকর্ষণ না করিলে কেহ আমার কাছে আসিতে পারে না, আর আমি তাহাকে শেষ দিনে উঠাইব। 45ভাববাদিগণের গ্রন্থে লেখা আছে, “তাহারা সকলে ঈশ্বরের কাছে শিক্ষা পাইবে।”#যিশ 54:13। যে কেহ পিতার নিকটে শুনিয়া শিক্ষা পাইয়াছে, সেই আমার কাছে আইসে। 46কেহ যে পিতাকে দেখিয়াছে, তাহা নয়; যিনি ঈশ্বর হইতে আসিয়াছেন, কেবল তিনিই পিতাকে দেখিয়াছেন। 47সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে। 48আমিই জীবন-খাদ্য। 49তোমাদের পিতৃপুরুষেরা প্রান্তরে মান্না খাইয়াছিল, আর তাহারা মরিয়া গিয়াছে। 50এ সেই খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আইসে, যেন লোকে তাহা খায়, ও না মরে। 51আমিই সেই জীবন্ত খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছে। কেহ যদি এই খাদ্য খায়, তবে সে অনন্তকাল জীবিত থাকিবে, আর আমি যে খাদ্য দিব, সে আমার মাংস, জগতের জীবনের জন্য।
52অতএব যিহূদীরা পরস্পর বাগ্‌যুদ্ধ করিয়া বলিতে লাগিল, এ ব্যক্তি কেমন করিয়া আমাদিগকে ভোজনের জন্য আপনার মাংস দিতে পারে?
53যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা যদি মনুষ্যপুত্রের মাংস ভোজন ও তাঁহার রক্ত পান না কর, তোমাদিগেতে জীবন নাই। 54যে আমার মাংস ভোজন ও আমার রক্ত পান করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে, এবং আমি তাহাকে শেষ দিনে উঠাইব। 55কারণ আমার মাংস প্রকৃত ভক্ষ্য, এবং আমার রক্ত প্রকৃত পানীয়। 56যে আমার মাংস ভোজন ও আমার রক্ত পান করে, সে আমাতে থাকে, এবং আমি তাহাতে থাকি। 57যেমন জীবন্ত পিতা আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, এবং পিতা হেতু আমি জীবিত আছি, সেইরূপ যে কেহ আমাকে ভোজন করে, সেও আমা হেতু জীবিত থাকিবে। 58এ সেই খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছে; পিতৃপুরুষেরা যেমন খাইয়াছিল, এবং মরিয়াছিল, সেইরূপ নয়; এই খাদ্য যে ভোজন করে, সে অনন্তকাল জীবিত থাকিবে।
59এই সকল কথা তিনি কফরনাহূমে উপদেশ দিবার সময়ে সমাজ-গৃহে কহিলেন।
60তাঁহার শিষ্যদের মধ্যে অনেকে এ কথা শুনিয়া বলিল, এ কঠিন কথা, কে ইহা শুনিতে পারে?
61কিন্তু তাঁহার শিষ্যেরা এই বিষয়ে বচসা করিতেছে, যীশু তাহা অন্তরে জ্ঞাত হইয়া তাহাদিগকে বলিলেন, এই কথায় কি তোমাদের বিঘ্ন জন্মে? 62তবে মনুষ্যপুত্র পূর্ব্বে যেখানে ছিলেন, সেখানে তোমরা তাঁহাকে উঠিতে দেখিলে কি বলিবে? 63আত্মাই জীবনদায়ক, মাংস কিছু উপকারী নয়; আমি তোমাদিগকে যে সকল কথা বলিয়াছি, তাহা আত্মা ও জীবন; 64কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেহ কেহ আছে, যাহারা বিশ্বাস করে না। কেননা যীশু প্রথম হইতে জানিতেন, কে কে বিশ্বাস করে না, এবং কেই বা তাঁহাকে শত্রুহস্তে সমর্পণ করিবে। 65তিনি আরও কহিলেন, এই জন্য আমি তোমাদিগকে বলিয়াছি, যদি পিতা হইতে ক্ষমতা দত্ত না হয়, তবে কেহই আমার নিকটে আসিতে পারে না।
66ইহাতে তাঁহার অনেক শিষ্য পিছাইয়া পড়িল, তাঁহার সঙ্গে আর যাতায়াত করিল না। 67অতএব যীশু সেই বারো জনকে কহিলেন, তোমরাও কি চলিয়া যাইতে ইচ্ছা করিতেছ?
68শিমোন পিতর তাঁহাকে উত্তর করিলেন, প্রভু, কাহার কাছে যাইব? আপনার নিকটে অনন্ত জীবনের কথা আছে; 69আর আমরা বিশ্বাস করিয়াছি এবং জ্ঞাত হইয়াছি যে, আপনিই ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি।
70যীশু তাঁহাদিগকে উত্তর করিলেন, তোমরা এই যে বারো জন, আমি কি তোমাদিগকে মনোনীত করি নাই? আর তোমাদের মধ্যেও এক জন দিয়াবল আছে। 71এই কথা তিনি ঈষ্করিয়োতীয় শিমোনের পুত্র যিহূদার বিষয়ে কহিলেন, কারণ সেই ব্যক্তি তাঁহাকে সমর্পণ করিবে, সে বারো জনের মধ্যে এক জন।

Highlight

Share

Copy

None

Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in