যোহনলিখিত সুসমাচার 12
12
বন্ধুদের সঙ্গে যীশু বৈথনিয়াতে
(মথি 26:6-13; মার্ক 14:3-9)
1নিস্তারপর্বের ছদিন আগে যীশু বৈথনিয়াতে গেলেন যেখানে লাসার বাস করতেন। এই মৃত লাসারকে যীশু বাঁচিয়েছিলেন। 2সেখানে তাঁরা যীশুর জন্য এক ভোজের আয়োজন করছিলেন। মার্থা খাবার পরিবেশন করছিলেন। যীশুর সঙ্গে যাঁরা খেতে বসেছিল তাদের মধ্যে লাসারও ছিলেন। 3তখন মরিয়ম বিশুদ্ধ জটামাংসী#12:3 জটামাংসী হিমালয় অঞ্চলে লভ্য এক সুগন্ধী ও দুস্প্রাপ্য চারাগাছ। থেকে তৈরী করা প্রায় আধ সের মতো দামী আতর নিয়ে এসে যীশুর পায়ে তা ঢেলে দিলেন, আর নিজের মাথার চুল দিয়ে তাঁর পা দুখানি মুছিয়ে দিলেন। তখন সমস্ত ঘর আতরের সুগন্ধে ভরে গেল।
4যিহূদা ঈষ্করিয়োত সেখানে ছিল, সে যীশুর শিষ্যদের মধ্যে একজন, যে তাঁকে পরে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দেবে। মরিয়মের সেই কাজ যিহূদার ভাল লাগে নি। যিহূদা ঈষ্করিয়োত বলল, 5“এই আতর একজন শ্রমিকের সারা বছরের পারিশ্রমিক#12:5 সারা বছরের পারিশ্রমিক আক্ষরিক অর্থে, “300 দিনারী।” সেই সময় এক দিনারী রৌপ্য মুদ্রা ছিল একজন শ্রমিকের দৈনিক পারিশ্রমিক। ছিল। এটা বিক্রি করে সেই অর্থ কেন দরিদ্রদের দেওয়া হল না?” 6গরীবদের জন্য চিন্তা করতো বলে যে সে একথা বলেছিল তা নয়, সে ছিল চোর। তার কাছে টাকার থলি থাকত আর সে তার থেকে প্রায়ই টাকা চুরি করতো।
7তখন যীশু বললেন, “ওকে থামিয়ে দিও না। আমাকে সমাধি দিনের জন্য প্রস্তুত করতে তাকে এই আতর রাখতে হয়েছে। 8তোমাদের মধ্যে গরীবরা সব সময়ই থাকবে, কিন্তু তোমরা সবসময় আমাকে পাবে না।”
লাসারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
9বহু ইহুদী জানতে পারল যে যীশু বৈথনিয়াতে আছেন। তারা সেখানে যে কেবল যীশুর জন্য গেল তাই নয়, যে লাসারকে যীশু মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছেন তাকে দেখবার জন্যও তারা সেখানে গেল। 10তাই প্রধান যাজকরা লাসারকে হত্যা করার চক্রান্ত করতে লাগলেন। 11কারণ তারই জন্য বহু ইহুদী তাদের ছেড়ে যীশুর ওপর বিশ্বাস করতে লাগল।
যীশুর জেরুশালেমে প্রবেশ
(মথি 21:1-11; মার্ক 11:1-11; লূক 19:28-40)
12যে বিপুল জনতা নিস্তারপর্বের জন্য এসেছিল, পরের দিন তারা শুনল যে যীশু জেরুশালেমে আসছেন। 13তখন তারা খেজুর পাতা নিয়ে তাঁকে স্বাগত জানাতে বেরিয়ে পড়ল। তারা চিৎকার করে বলতে লাগল,
“‘তাঁর প্রশংসা কর!’
‘তাঁকে স্বাগত জানাও! যিনি প্রভুর নামে আসছেন, ঈশ্বর তাঁকে আশীর্বাদ করুন।’#গীতসংহিতা 118:25-26
ইস্রায়েলের রাজাকে ঈশ্বর আশীর্বাদ করুন!”
14যীশু একটা গাধাকে দেখতে পেয়ে তার ওপর বসলেন, যেমন শাস্ত্রে লেখা আছে:
15“সিয়োন নগরী,#12:15 সিয়োন নগরী আক্ষরিক অর্থে, “সিয়োনের মেয়ে” অর্থাৎ জেরুশালেম শহর। ভয় পেও না!
দেখ, তোমাদের রাজা আসছেন।
দেখ, তোমাদের রাজা বাচ্চা গাধায় চড়ে আসছেন।”#সখরিয় 9:9
16এসবের অর্থ তাঁর শিষ্যরা প্রথমে বুঝতে পারেন নি। কিন্তু যীশু যখন মহিমায় উত্তোলিত হলেন, তখন তাঁদের মনে পড়ল যে শাস্ত্রে এগুলিই তাঁর সম্পর্কে লেখা হয়েছে এবং লোকেরা এসব তাঁর জন্য করেছিল।
17যীশু যখন লাসারকে কবর থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন, আর তাকে মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত করে তোলেন, তখন যে সব লোক সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিল তারা সে বিষয়ে সকলকে বলতে লাগল। 18এই কারণেই লোকেরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এল, কারণ তারা শুনেছিল, যে তিনিই ঐ অলৌকিক চিহ্নকার্য করেছেন। 19তখন ফরীশীরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “তোমরা দেখলে, আমাদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হল। দেখ, আজ সারা জগৎ তাঁরই পেছনে ছুটছে।”
যীশু জীবন ও মৃত্যুর বিষয়ে বললেন
20নিস্তারপর্ব উপলক্ষে উপাসনা করার জন্য যারা জেরুশালেমে এসেছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন গ্রীকও ছিল। 21তারা গালীলের বৈৎসৈদা থেকে যে ফিলিপ এসেছিলেন, তাঁর কাছে গেল, আর তাঁকে অনুরোধের সুরে বলল, “মহাশয় আমরা যীশুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই।” 22ফিলিপ এসে একথা আন্দ্রিয়কে জানালেন। তখন আন্দ্রিয় ও ফিলিপ এসে যীশুকে তা বললেন।
23যীশু তখন তাদের বললেন, “মানবপুত্রের মহিমান্বিত হওয়ার সময় হয়েছে। 24আমি তোমাদের সত্যি বলছি, গমের একটি দানা যদি মাটিতে পড়ে মরে না যায়, তবে তা একটি দানাই থেকে যায়। কিন্তু তা যদি মাটিতে পড়ে মরে যায়, তবে তার থেকে আরো অনেক দানা উৎপন্ন হয়। 25যে ব্যক্তি নিজের জীবনকে ভালবাসে সে তা হারাবে; কিন্তু যে এই জগতে তার জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে, সে তা রাখবে। সে অনন্ত জীবন পাবে। 26কেউ যদি আমার সেবা করে তবে অবশ্যই সে আমাকে অনুসরণ করবে। আর আমি যেখানে থাকি আমার সেবকও সেখানে থাকবে। কেউ যদি আমার সেবা করে তবে পিতা তাকে সম্মানিত করবেন।
যীশু তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে বললেন
27“এখন আমার অন্তর খুব বিচলিত। আমি কি বলব, ‘পিতা, এই কষ্ট ভোগের মুহূর্ত থেকে আমায় রক্ষা কর?’ না, কারণ সেই সময় এসেছে এবং কষ্ট ভোগ করার উদ্দেশ্যেই আমি এসেছি। 28পিতা, তোমার নামকে মহিমান্বিত কর!”
তখন স্বর্গ থেকে এক রব ভেসে এল, “আমি এঁকে মহিমান্বিত করেছি, আর আমি আবার তাঁকে মহিমান্বিত করব।”
29যে লোকেরা সেখানে ভীড় করেছিল, তারা সেই রব শুনে বলতে লাগল, এটা তো মেঘ গর্জন হল।
আবার কেউ কেউ বলল, “একজন স্বর্গদূত ওঁর সঙ্গে কথা বললেন।”
30এর উত্তরে যীশু বললেন, “আমার জন্য নয়, তোমাদের জন্যই ঐ রব। 31এখন জগতের বিচারের সময়। এই জগতের শাসককে দূরে নিক্ষেপ করা হবে। 32আর যখন আমাকে মাটি থেকে উঁচুতে তোলা হবে, তখন আমি আমার কাছে সকলকেই টেনে আনব।” 33যীশুর কিভাবে মৃত্যু হতে যাচ্ছে, তাই জানাতে যীশু এই কথা বললেন।
34এর উত্তরে লোকেরা তাঁকে বলল, “আমরা মোশির দেওয়া বিধি-ব্যবস্থা থেকে শুনেছি যে খ্রীষ্ট চিরকাল বাঁচবেন। তাহলে আপনি কিভাবে বলছেন যে, ‘মানবপুত্রকে উঁচুতে তোলা হবে’? এই ‘মানবপুত্র’ তবে কে?”
35তখন যীশু তাদের বললেন, “আর সামান্য কিছু সময়ের জন্য তোমাদের মধ্যে আলো থাকবে। যতক্ষণ তোমরা আলো পাচ্ছ, তারই মধ্য দিয়ে চল। তাহলে অন্ধকার তোমাদের আচ্ছন্ন করবে না। যে লোক অন্ধকারে চলে সে কোথায় যাচ্ছে তা জানে না। 36যতক্ষণ তোমাদের কাছে আলো আছে, সেই আলোতে বিশ্বাস কর, তাতে তোমরা আলোর সন্তান হবে।” এই কথা বলে যীশু সেখান থেকে চলে গেলেন ও তাদের কাছ থেকে নিজেকে গোপন রাখলেন।
ইহুদীরা যীশুর ওপর আস্থা রাখতে অস্বীকার করল
37যদিও যীশু তাদের চোখের সামনেই প্রচুর অলৌকিক চিহ্নকার্য করলেন, তবু তারা তাঁকে বিশ্বাস করল না। 38ভাববাদী যিশাইয় বলেছিলেন:
“প্রভু, আমাদের এই বার্তা কে বিশ্বাস করেছে?
আর কার কাছেই বা প্রভুর পরাক্রম প্রকাশ পেয়েছে?”#যিশাইয় 53:1
39এই কারণেই তারা বিশ্বাস করতে পারে নি, কারণ যিশাইয় আবার বলেছেন,
40“ঈশ্বর তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন।
ঈশ্বর তাদের অন্তর কঠিন করেছেন
যাতে তারা চোখ দিয়ে দেখতে না পায়, অন্তর দিয়ে বুঝতে না পারে
এবং ভাল হবার জন্য আমার কাছে না আসে।”#যিশাইয় 6:10
41যিশাইয় একথা বলেছিলেন, কারণ তিনি যীশুর মহিমা দেখেছিলেন আর তিনি তাঁর বিষয়েই বলেছিলেন।
42অনেকে, এমন কি ইহুদী নেতাদের মধ্যেও অনেকে তাঁর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করল; কিন্তু তারা ফরীশীদের ভয়ে প্রকাশ্যে তা স্বীকার করল না, পাছে তারা ইহুদীদের সমাজ-গৃহ থেকে বহিষ্কৃত হয়। 43কারণ তারা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা অপেক্ষা মানুষের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা বেশী ভালবাসত।
যীশুর শিক্ষাই মানুষের বিচার করবে
44যীশু চিৎকার করে বললেন, “যে আমাকে বিশ্বাস করে সে, প্রকৃতপক্ষে যিনি আমায় পাঠিয়েছেন, তাঁকেই বিশ্বাস করে। 45আর যে আমায় দেখে সে, যিনি আমায় পাঠিয়েছেন, তাঁকেই দেখতে পায়। 46আমি এ জগতে আলো রূপে এসেছি যাতে যে আমায় বিশ্বাস করে তাকে যেন অন্ধকারে থাকতে না হয়।
47“আর যে কেউ আমার কথা শোনে অথচ তা মেনে চলে না, তার বিচার করতে আমি চাই না, কারণ আমি জগতের বিচার করতে আসিনি, এসেছি জগতকে রক্ষা করতে। 48যে কেউ আমাকে অগ্রাহ্য করে ও আমার কথা গ্রহণ না করে, তার বিচার করার জন্য একজন বিচারক আছেন। আমি যে বার্তা দিয়েছি শেষ দিনে সেই বার্তাই তার বিচার করবে। 49কারণ আমি নিজে থেকে একথা বলছি না, বরং পিতা, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তিনি আমাকে কি বলতে হবে বা কি শিক্ষা দিতে হবে তা আদেশ করেছেন। 50আমি জানি যে তাঁর আদেশ থেকেই অনন্ত জীবন আসে। আমি সেই সকল কথা বলি যা পিতা আমায় বলেছেন।”
Currently Selected:
যোহনলিখিত সুসমাচার 12: BERV
Highlight
Share
Copy
Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version
All rights reserved.
© 2001 Bible League International
যোহনলিখিত সুসমাচার 12
12
বন্ধুদের সঙ্গে যীশু বৈথনিয়াতে
(মথি 26:6-13; মার্ক 14:3-9)
1নিস্তারপর্বের ছদিন আগে যীশু বৈথনিয়াতে গেলেন যেখানে লাসার বাস করতেন। এই মৃত লাসারকে যীশু বাঁচিয়েছিলেন। 2সেখানে তাঁরা যীশুর জন্য এক ভোজের আয়োজন করছিলেন। মার্থা খাবার পরিবেশন করছিলেন। যীশুর সঙ্গে যাঁরা খেতে বসেছিল তাদের মধ্যে লাসারও ছিলেন। 3তখন মরিয়ম বিশুদ্ধ জটামাংসী#12:3 জটামাংসী হিমালয় অঞ্চলে লভ্য এক সুগন্ধী ও দুস্প্রাপ্য চারাগাছ। থেকে তৈরী করা প্রায় আধ সের মতো দামী আতর নিয়ে এসে যীশুর পায়ে তা ঢেলে দিলেন, আর নিজের মাথার চুল দিয়ে তাঁর পা দুখানি মুছিয়ে দিলেন। তখন সমস্ত ঘর আতরের সুগন্ধে ভরে গেল।
4যিহূদা ঈষ্করিয়োত সেখানে ছিল, সে যীশুর শিষ্যদের মধ্যে একজন, যে তাঁকে পরে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দেবে। মরিয়মের সেই কাজ যিহূদার ভাল লাগে নি। যিহূদা ঈষ্করিয়োত বলল, 5“এই আতর একজন শ্রমিকের সারা বছরের পারিশ্রমিক#12:5 সারা বছরের পারিশ্রমিক আক্ষরিক অর্থে, “300 দিনারী।” সেই সময় এক দিনারী রৌপ্য মুদ্রা ছিল একজন শ্রমিকের দৈনিক পারিশ্রমিক। ছিল। এটা বিক্রি করে সেই অর্থ কেন দরিদ্রদের দেওয়া হল না?” 6গরীবদের জন্য চিন্তা করতো বলে যে সে একথা বলেছিল তা নয়, সে ছিল চোর। তার কাছে টাকার থলি থাকত আর সে তার থেকে প্রায়ই টাকা চুরি করতো।
7তখন যীশু বললেন, “ওকে থামিয়ে দিও না। আমাকে সমাধি দিনের জন্য প্রস্তুত করতে তাকে এই আতর রাখতে হয়েছে। 8তোমাদের মধ্যে গরীবরা সব সময়ই থাকবে, কিন্তু তোমরা সবসময় আমাকে পাবে না।”
লাসারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
9বহু ইহুদী জানতে পারল যে যীশু বৈথনিয়াতে আছেন। তারা সেখানে যে কেবল যীশুর জন্য গেল তাই নয়, যে লাসারকে যীশু মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছেন তাকে দেখবার জন্যও তারা সেখানে গেল। 10তাই প্রধান যাজকরা লাসারকে হত্যা করার চক্রান্ত করতে লাগলেন। 11কারণ তারই জন্য বহু ইহুদী তাদের ছেড়ে যীশুর ওপর বিশ্বাস করতে লাগল।
যীশুর জেরুশালেমে প্রবেশ
(মথি 21:1-11; মার্ক 11:1-11; লূক 19:28-40)
12যে বিপুল জনতা নিস্তারপর্বের জন্য এসেছিল, পরের দিন তারা শুনল যে যীশু জেরুশালেমে আসছেন। 13তখন তারা খেজুর পাতা নিয়ে তাঁকে স্বাগত জানাতে বেরিয়ে পড়ল। তারা চিৎকার করে বলতে লাগল,
“‘তাঁর প্রশংসা কর!’
‘তাঁকে স্বাগত জানাও! যিনি প্রভুর নামে আসছেন, ঈশ্বর তাঁকে আশীর্বাদ করুন।’#গীতসংহিতা 118:25-26
ইস্রায়েলের রাজাকে ঈশ্বর আশীর্বাদ করুন!”
14যীশু একটা গাধাকে দেখতে পেয়ে তার ওপর বসলেন, যেমন শাস্ত্রে লেখা আছে:
15“সিয়োন নগরী,#12:15 সিয়োন নগরী আক্ষরিক অর্থে, “সিয়োনের মেয়ে” অর্থাৎ জেরুশালেম শহর। ভয় পেও না!
দেখ, তোমাদের রাজা আসছেন।
দেখ, তোমাদের রাজা বাচ্চা গাধায় চড়ে আসছেন।”#সখরিয় 9:9
16এসবের অর্থ তাঁর শিষ্যরা প্রথমে বুঝতে পারেন নি। কিন্তু যীশু যখন মহিমায় উত্তোলিত হলেন, তখন তাঁদের মনে পড়ল যে শাস্ত্রে এগুলিই তাঁর সম্পর্কে লেখা হয়েছে এবং লোকেরা এসব তাঁর জন্য করেছিল।
17যীশু যখন লাসারকে কবর থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন, আর তাকে মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত করে তোলেন, তখন যে সব লোক সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিল তারা সে বিষয়ে সকলকে বলতে লাগল। 18এই কারণেই লোকেরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এল, কারণ তারা শুনেছিল, যে তিনিই ঐ অলৌকিক চিহ্নকার্য করেছেন। 19তখন ফরীশীরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “তোমরা দেখলে, আমাদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হল। দেখ, আজ সারা জগৎ তাঁরই পেছনে ছুটছে।”
যীশু জীবন ও মৃত্যুর বিষয়ে বললেন
20নিস্তারপর্ব উপলক্ষে উপাসনা করার জন্য যারা জেরুশালেমে এসেছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন গ্রীকও ছিল। 21তারা গালীলের বৈৎসৈদা থেকে যে ফিলিপ এসেছিলেন, তাঁর কাছে গেল, আর তাঁকে অনুরোধের সুরে বলল, “মহাশয় আমরা যীশুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই।” 22ফিলিপ এসে একথা আন্দ্রিয়কে জানালেন। তখন আন্দ্রিয় ও ফিলিপ এসে যীশুকে তা বললেন।
23যীশু তখন তাদের বললেন, “মানবপুত্রের মহিমান্বিত হওয়ার সময় হয়েছে। 24আমি তোমাদের সত্যি বলছি, গমের একটি দানা যদি মাটিতে পড়ে মরে না যায়, তবে তা একটি দানাই থেকে যায়। কিন্তু তা যদি মাটিতে পড়ে মরে যায়, তবে তার থেকে আরো অনেক দানা উৎপন্ন হয়। 25যে ব্যক্তি নিজের জীবনকে ভালবাসে সে তা হারাবে; কিন্তু যে এই জগতে তার জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে, সে তা রাখবে। সে অনন্ত জীবন পাবে। 26কেউ যদি আমার সেবা করে তবে অবশ্যই সে আমাকে অনুসরণ করবে। আর আমি যেখানে থাকি আমার সেবকও সেখানে থাকবে। কেউ যদি আমার সেবা করে তবে পিতা তাকে সম্মানিত করবেন।
যীশু তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে বললেন
27“এখন আমার অন্তর খুব বিচলিত। আমি কি বলব, ‘পিতা, এই কষ্ট ভোগের মুহূর্ত থেকে আমায় রক্ষা কর?’ না, কারণ সেই সময় এসেছে এবং কষ্ট ভোগ করার উদ্দেশ্যেই আমি এসেছি। 28পিতা, তোমার নামকে মহিমান্বিত কর!”
তখন স্বর্গ থেকে এক রব ভেসে এল, “আমি এঁকে মহিমান্বিত করেছি, আর আমি আবার তাঁকে মহিমান্বিত করব।”
29যে লোকেরা সেখানে ভীড় করেছিল, তারা সেই রব শুনে বলতে লাগল, এটা তো মেঘ গর্জন হল।
আবার কেউ কেউ বলল, “একজন স্বর্গদূত ওঁর সঙ্গে কথা বললেন।”
30এর উত্তরে যীশু বললেন, “আমার জন্য নয়, তোমাদের জন্যই ঐ রব। 31এখন জগতের বিচারের সময়। এই জগতের শাসককে দূরে নিক্ষেপ করা হবে। 32আর যখন আমাকে মাটি থেকে উঁচুতে তোলা হবে, তখন আমি আমার কাছে সকলকেই টেনে আনব।” 33যীশুর কিভাবে মৃত্যু হতে যাচ্ছে, তাই জানাতে যীশু এই কথা বললেন।
34এর উত্তরে লোকেরা তাঁকে বলল, “আমরা মোশির দেওয়া বিধি-ব্যবস্থা থেকে শুনেছি যে খ্রীষ্ট চিরকাল বাঁচবেন। তাহলে আপনি কিভাবে বলছেন যে, ‘মানবপুত্রকে উঁচুতে তোলা হবে’? এই ‘মানবপুত্র’ তবে কে?”
35তখন যীশু তাদের বললেন, “আর সামান্য কিছু সময়ের জন্য তোমাদের মধ্যে আলো থাকবে। যতক্ষণ তোমরা আলো পাচ্ছ, তারই মধ্য দিয়ে চল। তাহলে অন্ধকার তোমাদের আচ্ছন্ন করবে না। যে লোক অন্ধকারে চলে সে কোথায় যাচ্ছে তা জানে না। 36যতক্ষণ তোমাদের কাছে আলো আছে, সেই আলোতে বিশ্বাস কর, তাতে তোমরা আলোর সন্তান হবে।” এই কথা বলে যীশু সেখান থেকে চলে গেলেন ও তাদের কাছ থেকে নিজেকে গোপন রাখলেন।
ইহুদীরা যীশুর ওপর আস্থা রাখতে অস্বীকার করল
37যদিও যীশু তাদের চোখের সামনেই প্রচুর অলৌকিক চিহ্নকার্য করলেন, তবু তারা তাঁকে বিশ্বাস করল না। 38ভাববাদী যিশাইয় বলেছিলেন:
“প্রভু, আমাদের এই বার্তা কে বিশ্বাস করেছে?
আর কার কাছেই বা প্রভুর পরাক্রম প্রকাশ পেয়েছে?”#যিশাইয় 53:1
39এই কারণেই তারা বিশ্বাস করতে পারে নি, কারণ যিশাইয় আবার বলেছেন,
40“ঈশ্বর তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন।
ঈশ্বর তাদের অন্তর কঠিন করেছেন
যাতে তারা চোখ দিয়ে দেখতে না পায়, অন্তর দিয়ে বুঝতে না পারে
এবং ভাল হবার জন্য আমার কাছে না আসে।”#যিশাইয় 6:10
41যিশাইয় একথা বলেছিলেন, কারণ তিনি যীশুর মহিমা দেখেছিলেন আর তিনি তাঁর বিষয়েই বলেছিলেন।
42অনেকে, এমন কি ইহুদী নেতাদের মধ্যেও অনেকে তাঁর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করল; কিন্তু তারা ফরীশীদের ভয়ে প্রকাশ্যে তা স্বীকার করল না, পাছে তারা ইহুদীদের সমাজ-গৃহ থেকে বহিষ্কৃত হয়। 43কারণ তারা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা অপেক্ষা মানুষের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা বেশী ভালবাসত।
যীশুর শিক্ষাই মানুষের বিচার করবে
44যীশু চিৎকার করে বললেন, “যে আমাকে বিশ্বাস করে সে, প্রকৃতপক্ষে যিনি আমায় পাঠিয়েছেন, তাঁকেই বিশ্বাস করে। 45আর যে আমায় দেখে সে, যিনি আমায় পাঠিয়েছেন, তাঁকেই দেখতে পায়। 46আমি এ জগতে আলো রূপে এসেছি যাতে যে আমায় বিশ্বাস করে তাকে যেন অন্ধকারে থাকতে না হয়।
47“আর যে কেউ আমার কথা শোনে অথচ তা মেনে চলে না, তার বিচার করতে আমি চাই না, কারণ আমি জগতের বিচার করতে আসিনি, এসেছি জগতকে রক্ষা করতে। 48যে কেউ আমাকে অগ্রাহ্য করে ও আমার কথা গ্রহণ না করে, তার বিচার করার জন্য একজন বিচারক আছেন। আমি যে বার্তা দিয়েছি শেষ দিনে সেই বার্তাই তার বিচার করবে। 49কারণ আমি নিজে থেকে একথা বলছি না, বরং পিতা, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তিনি আমাকে কি বলতে হবে বা কি শিক্ষা দিতে হবে তা আদেশ করেছেন। 50আমি জানি যে তাঁর আদেশ থেকেই অনন্ত জীবন আসে। আমি সেই সকল কথা বলি যা পিতা আমায় বলেছেন।”
Currently Selected:
:
Highlight
Share
Copy
Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version
All rights reserved.
© 2001 Bible League International