লূক 22
22
ঈসা মসীহ্কে হত্যা করবার ষড়যন্ত্র
1তখন খামিহীন রুটির ঈদ নিকটবর্তী হচ্ছিল। এই ঈদকে ঈদুল ফেসাখও বলা হয়। 2আর প্রধান ইমামেরা ও আলেমেরা কিভাবে তাঁকে হত্যা করতে পারে, তারই চেষ্টা করছিল; কেননা তারা লোকদেরকে ভয় করতো।
ঈষ্করিয়োতীয় এহুদার বেইমানী
3আর শয়তান ঈষ্করিয়োতীয় এহুদা, বারো জনের এক জন, তার ভিতরে প্রবেশ করলো। 4তখন সে গিয়ে কিভাবে ঈসাকে তাদের হাতে তুলে দিতে পারবে সেই ব্যাপারে প্রধান ইমামদের ও সেনাপতিদের সঙ্গে কথাবার্তা বললো। 5এতে তারা আনন্দিত হয়ে তাকে টাকা দিতে ওয়াদা করলো। 6তাতে এহুদা সম্মত হল এবং জনতার অগোচরে তাঁকে তাদের হাতে ধরিয়ে দেবার সুযোগ খুঁজতে লাগল।
ঈদুল ফেসাখের প্রস্তুতি
7পরে খামিহীন রুটির দিন, অর্থাৎ যেদিন ঈদুল ফেসাখের ভেড়ার বাচ্চা কোরবানী করতে হত, সেই দিন আসল। 8তখন তিনি পিতর ও ইউহোন্নাকে প্রেরণ করে বললেন, তোমরা গিয়ে আমাদের জন্য ঈদুল ফেসাখের মেজবানী প্রস্তুত কর, আমরা ভোজন করবো। 9তাঁরা বললেন, কোথায় প্রস্তুত করবো? আপনার ইচ্ছা কি? 10তিনি তাঁদেরকে বললেন, দেখ, তোমরা নগরে প্রবেশ করলে এমন এক ব্যক্তি তোমাদের সম্মুখে পড়বে, যে ব্যক্তি এক কলসী পানি নিয়ে আসছে; তোমরা তার পিছন পিছন যে বাড়িতে সে প্রবেশ করবে সেখানে যাবে। 11আর তোমরা বাড়ির মালিককে বলবে, হুজুর আপনাকে বলছেন, যেখানে আমি আমার সাহাবীদের সঙ্গে ঈদুল ফেসাখের মেজবানীর ভোজন করতে পারি, সেই মেহমানশালা কোথায়? 12তাতে সে তোমাদেরকে সাজানো একটি উপরের বড় কুঠরী দেখিয়ে দেবে; সেই স্থানে মেজবানী প্রস্তুত করো। 13তাঁরা গিয়ে তিনি যেমন বলেছিলেন, তেমনই দেখতে পেলেন; আর ঈদুল ফেসাখের মেজবানীর প্রস্তুত করলেন।
প্রভুর মেজবানী স্থাপন
14পরে সময় উপস্থিত হলে তিনি ও তাঁর সঙ্গে প্রেরিতেরা ভোজনে বসলেন। 15তখন তিনি তাঁদেরকে বললেন, আমার দুঃখ-ভোগের আগে তোমাদের সঙ্গে আমি এই ঈদুল ফেসাখের মেজবানীর ভোজন করতে একান্তই বাঞ্ছা করেছি; 16কেননা আমি তোমাদেরকে বলছি, যে পর্যন্ত আল্লাহ্র রাজ্যে এর উদ্দেশ্য পূর্ণ না হয়, সেই পর্যন্ত আমি তা আর ভোজন করবো না। 17পরে তিনি পানপাত্র গ্রহণ করে শুকরিয়াপূর্বক বললেন, এই নাও এবং নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নাও; 18কেননা আমি তোমাদেরকে বলছি, যে পর্যন্ত আল্লাহ্র রাজ্যের আগমন না হয়, এখন থেকে সেই পর্যন্ত আমি আঙ্গুর ফলের রস আর পান করবো না। 19পরে তিনি রুটি নিয়ে শুকরিয়াপূর্বক ভাঙ্গলেন এবং তাঁদেরকে দিলেন, বললেন, এ আমার শরীর, যা তোমাদের জন্য দেওয়া যাচ্ছে, আমার স্মরণার্থে এরকম করো। 20আর সেভাবে তিনি ভোজন শেষ হলে পানপাত্রটি নিয়ে বললেন, এই পানপাত্র আমার রক্তে নতুন নিয়ম, যে রক্ত তোমাদের জন্য ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। 21কিন্তু দেখ, যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, তার হাত আমার সঙ্গে টেবিলের উপরে রয়েছে। 22কেননা যেমন নির্ধারিত হয়েছে, সেই অনুসারে ইবনুল-ইনসান যাচ্ছেন, কিন্তু ধিক্ সেই ব্যক্তিকে, যে ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। 23তখন তাঁরা পরস্পর জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, তবে আমাদের মধ্যে এই কাজ কে করবে?
শ্রেষ্ঠ কে তা নিয়ে বিতর্ক
24আর তাঁদের মধ্যে এই বিবাদও উৎপন্ন হল যে, তাঁদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য? 25কিন্তু তিনি তাঁদেরকে বললেন, জাতিদের বাদশাহ্রাই তাদের উপরে প্রভুত্ব করে এবং তাদের শাসনকর্তারাই ‘হিতকারী’ বলে আখ্যাত হয়। 26কিন্তু তোমরা সেরকম হয়ো না; বরং তোমাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ, সে কনিষ্ঠের মত হোক এবং যে প্রধান, সে পরিচারকের মত হোক। 27কারণ কে শ্রেষ্ঠ? যে ভোজনে বসে, না যে পরিচর্যা করে? যে ভোজনে বসে, সেই কি নয়? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে পরিচারকের মত রয়েছি।
28তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার মধ্যে আমার সঙ্গে সঙ্গে বরাবর রয়েছ; 29আর আমার পিতা যেমন আমার জন্য নির্ধারণ করেছেন, আমিও তেমনি তোমাদের জন্য একটি রাজ্য নির্ধারণ করছি, 30যেন তোমরা আমার রাজ্যে আমার মেঝে ভোজন পান কর; আর তোমরা সিংহাসনে বসে ইসরাইলের বারো বংশের বিচার করবে।
পিতরের অস্বীকার করার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী
31শিমোন, শিমোন, দেখ, শয়তান তোমাদেরকে গমের মত চালবার জন্য দাবী করছে; 32কিন্তু আমি তোমার জন্য ফরিয়াদ করেছি, যেন তোমার নিজের ঈমান ব্যর্থ না হয়; আর তুমিও একবার ফিরলে পর তোমার ভাইদেরকে সুস্থির করো। 33তিনি তাঁকে বললেন, প্রভু, আপনার সঙ্গে আমি কারাগারে যেতে এবং মরতেও প্রস্তুত আছি। 34তিনি বললেন, পিতর, আমি তোমাকে বলছি, যে পর্যন্ত তুমি আমাকে চিন না বলে তিন বার অস্বীকার না করবে, সেই পর্যন্ত আজ মোরগ ডাকবে না।
থলি, ঝুলি ও তলোয়ার
35আর তিনি তাঁদেরকে বললেন, আমি যখন থলি, ঝুলি ও জুতা ছাড়া তোমাদেরকে পাঠিয়েছিলাম, তখন তোমাদের কি কিছুর অভাব হয়েছিল? তাঁরা বললেন, কিছুরই নয়। 36তখন তিনি তাঁদেরকে বললেন, কিন্তু এখন যার থলি আছে, সে তা গ্রহণ করুক, একই ভাবে ঝুলিও গ্রহণ করুক এবং যার নেই, সে তার কোর্তা বিক্রি করে তলোয়ার ক্রয় করুক। 37কেননা আমি তোমাদেরকে বলছি, এই যে কালাম লেখা আছে, “আর তিনি অধর্মীদের সঙ্গে গণিত হলেন,” তা আমার মধ্যে পূর্ণ হতে হবে; কারণ আমার সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা পূর্ণ হচ্ছে। 38তখন তাঁরা বললেন, প্রভু, দেখুন, দু’খানি তলোয়ার আছে। তিনি তাদেরকে বললেন, এই যথেষ্ট।
গেৎশিমানী বাগানে ঈসা মসীহের মুনাজাত
39পরে তিনি বের হয়ে আপন রীতি অনুসারে জৈতুন পর্বতে গেলেন এবং সাহাবীরাও তাঁর পিছন পিছন চললেন। 40সেই স্থানে উপস্থিত হলে পর তিনি তাঁদেরকে বললেন, তোমরা মুনাজাত কর, যেন পরীক্ষায় না পড়। 41পরে তিনি তাদের থেকে কমবেশ এক ঢেলার পথ দূরে গেলেন এবং জানু পেতে মুনাজাত করতে লাগলেন, 42বললেন, পিতা, যদি তোমার অভিমত হয়, আমার কাছ থেকে এই পানপাত্র দূর কর; তবুও আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক; 43তখন বেহেশত থেকে এক জন ফেরেশতা দেখা দিয়ে তাঁকে সবল করলেন। 44পরে তিনি মর্মভেদী দুঃখে মগ্ন হয়ে আরও একাগ্রভাবে মুনাজাত করলেন; আর তাঁর শরীরের ঘাম যেন রক্তের ঘনীভূত বড় বড় ফোঁটা হয়ে ভূমিতে পড়তে লাগল। 45পরে তিনি মুনাজাত করে উঠলে পর সাহাবীদের কাছে এসে দেখলেন, তাঁরা মনের দুঃখের কারণে ঘুমিয়ে পড়েছেন, 46আর তাঁদেরকে বললেন, কেন ঘুমাচ্ছো? উঠ, মুনাজাত কর, যেন পরীক্ষায় না পড়।
দুশমনদের হাতে ঈসা মসীহ্
47তিনি কথা বলছেন, এমন সময়ে দেখ, অনেক লোক এবং যার নাম এহুদা— সেই বারো জনের মধ্যে এক জন— সে তাদের আগে আগে আসছে; সে ঈসাকে চুম্বন করার জন্য তাঁর কাছে আসল। 48কিন্তু ঈসা তাঁকে বললেন, এহুদা, চুম্বন দ্বারা কি ইবনুল-ইনসানকে ধরিয়ে দিচ্ছ? 49তখন কি কি ঘটবে, তা দেখে যাঁরা তাঁর কাছে ছিলেন, তাঁরা বললেন, প্রভু, আমরা কি তলোয়ার দ্বারা আঘাত করবো? 50আর তাঁদের মধ্যে এক ব্যক্তি মহা-ইমামের গোলামকে আঘাত করে তার ডান কান কেটে ফেললেন। 51কিন্তু জবাবে ঈসা বললেন, এই পর্যন্ত ক্ষান্ত হও। পরে তিনি তার কান স্পর্শ করে তাকে সুস্থ করলেন। 52আর তাঁর বিরুদ্ধে যে প্রধান ইমামেরা, বায়তুল-মোকাদ্দসের সেনাপতিরা ও প্রাচীনবর্গরা এসেছিল, ঈসা তাদেরকে বললেন, লোকে যেমন দস্যুর বিরুদ্ধে যায়, তেমনি তলোয়ার ও লাঠি নিয়ে কি তোমরা আসলে? 53আমি যখন প্রতিদিন বায়তুল-মোকাদ্দসে তোমাদের সঙ্গে ছিলাম, তখন তো আমার উপর তোমরা হাত তোল নি; কিন্তু এখন তোমাদের সময় এবং অন্ধকারের অধিকার।
হযরত পিতরের অস্বীকার
54পরে তারা তাঁকে ধরে নিয়ে গেল এবং মহা-ইমামের বাড়িতে আনলো; আর পিতর দূরে থেকে পিছন পিছন চললেন। 55পরে লোকেরা প্রাঙ্গণের মধ্যে আগুন জ্বেলে একত্রে বসলে পিতর তাদের মধ্যে বসলেন। 56তিনি সেই আলোর কাছে বসলে এক জন বাঁদী তাঁকে দেখে তাঁর দিকে একদৃষ্টে চেয়ে বললো, এই ব্যক্তিও ওর সঙ্গে ছিল। 57কিন্তু তিনি অস্বীকার করে বললেন, হে নারী, আমি তাঁকে চিনি না। 58একটু পরে আর এক জন তাঁকে দেখে বললো, তুমিও তাদের এক জন। পিতর বললেন, ওহে, আমি নই। 59ঘণ্টা খানেক পরে আর এক জন দৃঢ়ভাবে বললো, সত্যি, এই ব্যক্তিও তার সঙ্গে ছিল, কেননা এ গালীলীয় লোক। 60তখন পিতর বললেন, ওহে, তুমি কি বলছো আমি বুঝতে পারছি না। তিনি কথা বলছিলেন, আর অমনি মোরগ ডেকে উঠলো। 61আর প্রভু মুখ ফিরিয়ে পিতরের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন; তাতে প্রভু এই যে কালাম বলেছিলেন, ‘আজ মোরগ ডাকবার আগে তুমি তিন বার আমাকে অস্বীকার করবে,’ তা পিতরের মনে পড়লো। 62আর তিনি বাইরে গিয়ে ভীষণভাবে কান্নাকাটি করলেন।
ঈসা মসীহ্কে প্রহার ও বিদ্রুপ করা
63আর যে লোকেরা ঈসাকে ধরেছিল, তারা তাঁকে বিদ্রূপ ও প্রহার করতে লাগল। 64আর তাঁর চোখ ঢেকে জিজ্ঞাসা করলো, ভবিষ্যদ্বাণী বল্ দেখি, কে তোকে মারলো? 65আর তারা নিন্দা করে তাঁর বিরুদ্ধে আরও অনেক কথা বলতে লাগল।
মহাসভার সম্মুখে ঈসা মসীহ্
66যখন দিন হল, তখন লোকদের প্রাচীনদের সমাজ, প্রধান ইমামেরা আলেমরা একত্র হল এবং তাদের মাহ্ফিলের মধ্যে তাঁকে আনালো, আর বললো, তুমি যদি সেই মসীহ্ হও, তবে আমাদেরকে বল। 67তিনি তাদেরকে বললেন, যদি তোমাদেরকে বলি, তোমরা বিশ্বাস করবে না; 68আর যদি তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করি, কোন উত্তর দেবে না; 69কিন্তু এখন থেকে ইবনুল-ইনসান আল্লাহ্র পরাক্রমের ডান পাশে উপবিষ্ট থাকবেন। 70তখন সকলে বললো, তবে তুমি কি আল্লাহ্র পুত্র? তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরাই বলছো যে, আমি সেই। 71তখন তারা বললো, আর সাক্ষ্যে আমাদের কি প্রয়োজন? আমরা নিজেরাই তো এর মুখে শুনলাম।
Currently Selected:
লূক 22: BACIB
Highlight
Share
Copy
Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in
Kitabul Muqaddas (BACIB) Copyright © Biblical Aids to Churches in Bangladesh, 2013
লূক 22
22
ঈসা মসীহ্কে হত্যা করবার ষড়যন্ত্র
1তখন খামিহীন রুটির ঈদ নিকটবর্তী হচ্ছিল। এই ঈদকে ঈদুল ফেসাখও বলা হয়। 2আর প্রধান ইমামেরা ও আলেমেরা কিভাবে তাঁকে হত্যা করতে পারে, তারই চেষ্টা করছিল; কেননা তারা লোকদেরকে ভয় করতো।
ঈষ্করিয়োতীয় এহুদার বেইমানী
3আর শয়তান ঈষ্করিয়োতীয় এহুদা, বারো জনের এক জন, তার ভিতরে প্রবেশ করলো। 4তখন সে গিয়ে কিভাবে ঈসাকে তাদের হাতে তুলে দিতে পারবে সেই ব্যাপারে প্রধান ইমামদের ও সেনাপতিদের সঙ্গে কথাবার্তা বললো। 5এতে তারা আনন্দিত হয়ে তাকে টাকা দিতে ওয়াদা করলো। 6তাতে এহুদা সম্মত হল এবং জনতার অগোচরে তাঁকে তাদের হাতে ধরিয়ে দেবার সুযোগ খুঁজতে লাগল।
ঈদুল ফেসাখের প্রস্তুতি
7পরে খামিহীন রুটির দিন, অর্থাৎ যেদিন ঈদুল ফেসাখের ভেড়ার বাচ্চা কোরবানী করতে হত, সেই দিন আসল। 8তখন তিনি পিতর ও ইউহোন্নাকে প্রেরণ করে বললেন, তোমরা গিয়ে আমাদের জন্য ঈদুল ফেসাখের মেজবানী প্রস্তুত কর, আমরা ভোজন করবো। 9তাঁরা বললেন, কোথায় প্রস্তুত করবো? আপনার ইচ্ছা কি? 10তিনি তাঁদেরকে বললেন, দেখ, তোমরা নগরে প্রবেশ করলে এমন এক ব্যক্তি তোমাদের সম্মুখে পড়বে, যে ব্যক্তি এক কলসী পানি নিয়ে আসছে; তোমরা তার পিছন পিছন যে বাড়িতে সে প্রবেশ করবে সেখানে যাবে। 11আর তোমরা বাড়ির মালিককে বলবে, হুজুর আপনাকে বলছেন, যেখানে আমি আমার সাহাবীদের সঙ্গে ঈদুল ফেসাখের মেজবানীর ভোজন করতে পারি, সেই মেহমানশালা কোথায়? 12তাতে সে তোমাদেরকে সাজানো একটি উপরের বড় কুঠরী দেখিয়ে দেবে; সেই স্থানে মেজবানী প্রস্তুত করো। 13তাঁরা গিয়ে তিনি যেমন বলেছিলেন, তেমনই দেখতে পেলেন; আর ঈদুল ফেসাখের মেজবানীর প্রস্তুত করলেন।
প্রভুর মেজবানী স্থাপন
14পরে সময় উপস্থিত হলে তিনি ও তাঁর সঙ্গে প্রেরিতেরা ভোজনে বসলেন। 15তখন তিনি তাঁদেরকে বললেন, আমার দুঃখ-ভোগের আগে তোমাদের সঙ্গে আমি এই ঈদুল ফেসাখের মেজবানীর ভোজন করতে একান্তই বাঞ্ছা করেছি; 16কেননা আমি তোমাদেরকে বলছি, যে পর্যন্ত আল্লাহ্র রাজ্যে এর উদ্দেশ্য পূর্ণ না হয়, সেই পর্যন্ত আমি তা আর ভোজন করবো না। 17পরে তিনি পানপাত্র গ্রহণ করে শুকরিয়াপূর্বক বললেন, এই নাও এবং নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নাও; 18কেননা আমি তোমাদেরকে বলছি, যে পর্যন্ত আল্লাহ্র রাজ্যের আগমন না হয়, এখন থেকে সেই পর্যন্ত আমি আঙ্গুর ফলের রস আর পান করবো না। 19পরে তিনি রুটি নিয়ে শুকরিয়াপূর্বক ভাঙ্গলেন এবং তাঁদেরকে দিলেন, বললেন, এ আমার শরীর, যা তোমাদের জন্য দেওয়া যাচ্ছে, আমার স্মরণার্থে এরকম করো। 20আর সেভাবে তিনি ভোজন শেষ হলে পানপাত্রটি নিয়ে বললেন, এই পানপাত্র আমার রক্তে নতুন নিয়ম, যে রক্ত তোমাদের জন্য ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। 21কিন্তু দেখ, যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, তার হাত আমার সঙ্গে টেবিলের উপরে রয়েছে। 22কেননা যেমন নির্ধারিত হয়েছে, সেই অনুসারে ইবনুল-ইনসান যাচ্ছেন, কিন্তু ধিক্ সেই ব্যক্তিকে, যে ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। 23তখন তাঁরা পরস্পর জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, তবে আমাদের মধ্যে এই কাজ কে করবে?
শ্রেষ্ঠ কে তা নিয়ে বিতর্ক
24আর তাঁদের মধ্যে এই বিবাদও উৎপন্ন হল যে, তাঁদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য? 25কিন্তু তিনি তাঁদেরকে বললেন, জাতিদের বাদশাহ্রাই তাদের উপরে প্রভুত্ব করে এবং তাদের শাসনকর্তারাই ‘হিতকারী’ বলে আখ্যাত হয়। 26কিন্তু তোমরা সেরকম হয়ো না; বরং তোমাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ, সে কনিষ্ঠের মত হোক এবং যে প্রধান, সে পরিচারকের মত হোক। 27কারণ কে শ্রেষ্ঠ? যে ভোজনে বসে, না যে পরিচর্যা করে? যে ভোজনে বসে, সেই কি নয়? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে পরিচারকের মত রয়েছি।
28তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার মধ্যে আমার সঙ্গে সঙ্গে বরাবর রয়েছ; 29আর আমার পিতা যেমন আমার জন্য নির্ধারণ করেছেন, আমিও তেমনি তোমাদের জন্য একটি রাজ্য নির্ধারণ করছি, 30যেন তোমরা আমার রাজ্যে আমার মেঝে ভোজন পান কর; আর তোমরা সিংহাসনে বসে ইসরাইলের বারো বংশের বিচার করবে।
পিতরের অস্বীকার করার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী
31শিমোন, শিমোন, দেখ, শয়তান তোমাদেরকে গমের মত চালবার জন্য দাবী করছে; 32কিন্তু আমি তোমার জন্য ফরিয়াদ করেছি, যেন তোমার নিজের ঈমান ব্যর্থ না হয়; আর তুমিও একবার ফিরলে পর তোমার ভাইদেরকে সুস্থির করো। 33তিনি তাঁকে বললেন, প্রভু, আপনার সঙ্গে আমি কারাগারে যেতে এবং মরতেও প্রস্তুত আছি। 34তিনি বললেন, পিতর, আমি তোমাকে বলছি, যে পর্যন্ত তুমি আমাকে চিন না বলে তিন বার অস্বীকার না করবে, সেই পর্যন্ত আজ মোরগ ডাকবে না।
থলি, ঝুলি ও তলোয়ার
35আর তিনি তাঁদেরকে বললেন, আমি যখন থলি, ঝুলি ও জুতা ছাড়া তোমাদেরকে পাঠিয়েছিলাম, তখন তোমাদের কি কিছুর অভাব হয়েছিল? তাঁরা বললেন, কিছুরই নয়। 36তখন তিনি তাঁদেরকে বললেন, কিন্তু এখন যার থলি আছে, সে তা গ্রহণ করুক, একই ভাবে ঝুলিও গ্রহণ করুক এবং যার নেই, সে তার কোর্তা বিক্রি করে তলোয়ার ক্রয় করুক। 37কেননা আমি তোমাদেরকে বলছি, এই যে কালাম লেখা আছে, “আর তিনি অধর্মীদের সঙ্গে গণিত হলেন,” তা আমার মধ্যে পূর্ণ হতে হবে; কারণ আমার সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা পূর্ণ হচ্ছে। 38তখন তাঁরা বললেন, প্রভু, দেখুন, দু’খানি তলোয়ার আছে। তিনি তাদেরকে বললেন, এই যথেষ্ট।
গেৎশিমানী বাগানে ঈসা মসীহের মুনাজাত
39পরে তিনি বের হয়ে আপন রীতি অনুসারে জৈতুন পর্বতে গেলেন এবং সাহাবীরাও তাঁর পিছন পিছন চললেন। 40সেই স্থানে উপস্থিত হলে পর তিনি তাঁদেরকে বললেন, তোমরা মুনাজাত কর, যেন পরীক্ষায় না পড়। 41পরে তিনি তাদের থেকে কমবেশ এক ঢেলার পথ দূরে গেলেন এবং জানু পেতে মুনাজাত করতে লাগলেন, 42বললেন, পিতা, যদি তোমার অভিমত হয়, আমার কাছ থেকে এই পানপাত্র দূর কর; তবুও আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক; 43তখন বেহেশত থেকে এক জন ফেরেশতা দেখা দিয়ে তাঁকে সবল করলেন। 44পরে তিনি মর্মভেদী দুঃখে মগ্ন হয়ে আরও একাগ্রভাবে মুনাজাত করলেন; আর তাঁর শরীরের ঘাম যেন রক্তের ঘনীভূত বড় বড় ফোঁটা হয়ে ভূমিতে পড়তে লাগল। 45পরে তিনি মুনাজাত করে উঠলে পর সাহাবীদের কাছে এসে দেখলেন, তাঁরা মনের দুঃখের কারণে ঘুমিয়ে পড়েছেন, 46আর তাঁদেরকে বললেন, কেন ঘুমাচ্ছো? উঠ, মুনাজাত কর, যেন পরীক্ষায় না পড়।
দুশমনদের হাতে ঈসা মসীহ্
47তিনি কথা বলছেন, এমন সময়ে দেখ, অনেক লোক এবং যার নাম এহুদা— সেই বারো জনের মধ্যে এক জন— সে তাদের আগে আগে আসছে; সে ঈসাকে চুম্বন করার জন্য তাঁর কাছে আসল। 48কিন্তু ঈসা তাঁকে বললেন, এহুদা, চুম্বন দ্বারা কি ইবনুল-ইনসানকে ধরিয়ে দিচ্ছ? 49তখন কি কি ঘটবে, তা দেখে যাঁরা তাঁর কাছে ছিলেন, তাঁরা বললেন, প্রভু, আমরা কি তলোয়ার দ্বারা আঘাত করবো? 50আর তাঁদের মধ্যে এক ব্যক্তি মহা-ইমামের গোলামকে আঘাত করে তার ডান কান কেটে ফেললেন। 51কিন্তু জবাবে ঈসা বললেন, এই পর্যন্ত ক্ষান্ত হও। পরে তিনি তার কান স্পর্শ করে তাকে সুস্থ করলেন। 52আর তাঁর বিরুদ্ধে যে প্রধান ইমামেরা, বায়তুল-মোকাদ্দসের সেনাপতিরা ও প্রাচীনবর্গরা এসেছিল, ঈসা তাদেরকে বললেন, লোকে যেমন দস্যুর বিরুদ্ধে যায়, তেমনি তলোয়ার ও লাঠি নিয়ে কি তোমরা আসলে? 53আমি যখন প্রতিদিন বায়তুল-মোকাদ্দসে তোমাদের সঙ্গে ছিলাম, তখন তো আমার উপর তোমরা হাত তোল নি; কিন্তু এখন তোমাদের সময় এবং অন্ধকারের অধিকার।
হযরত পিতরের অস্বীকার
54পরে তারা তাঁকে ধরে নিয়ে গেল এবং মহা-ইমামের বাড়িতে আনলো; আর পিতর দূরে থেকে পিছন পিছন চললেন। 55পরে লোকেরা প্রাঙ্গণের মধ্যে আগুন জ্বেলে একত্রে বসলে পিতর তাদের মধ্যে বসলেন। 56তিনি সেই আলোর কাছে বসলে এক জন বাঁদী তাঁকে দেখে তাঁর দিকে একদৃষ্টে চেয়ে বললো, এই ব্যক্তিও ওর সঙ্গে ছিল। 57কিন্তু তিনি অস্বীকার করে বললেন, হে নারী, আমি তাঁকে চিনি না। 58একটু পরে আর এক জন তাঁকে দেখে বললো, তুমিও তাদের এক জন। পিতর বললেন, ওহে, আমি নই। 59ঘণ্টা খানেক পরে আর এক জন দৃঢ়ভাবে বললো, সত্যি, এই ব্যক্তিও তার সঙ্গে ছিল, কেননা এ গালীলীয় লোক। 60তখন পিতর বললেন, ওহে, তুমি কি বলছো আমি বুঝতে পারছি না। তিনি কথা বলছিলেন, আর অমনি মোরগ ডেকে উঠলো। 61আর প্রভু মুখ ফিরিয়ে পিতরের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন; তাতে প্রভু এই যে কালাম বলেছিলেন, ‘আজ মোরগ ডাকবার আগে তুমি তিন বার আমাকে অস্বীকার করবে,’ তা পিতরের মনে পড়লো। 62আর তিনি বাইরে গিয়ে ভীষণভাবে কান্নাকাটি করলেন।
ঈসা মসীহ্কে প্রহার ও বিদ্রুপ করা
63আর যে লোকেরা ঈসাকে ধরেছিল, তারা তাঁকে বিদ্রূপ ও প্রহার করতে লাগল। 64আর তাঁর চোখ ঢেকে জিজ্ঞাসা করলো, ভবিষ্যদ্বাণী বল্ দেখি, কে তোকে মারলো? 65আর তারা নিন্দা করে তাঁর বিরুদ্ধে আরও অনেক কথা বলতে লাগল।
মহাসভার সম্মুখে ঈসা মসীহ্
66যখন দিন হল, তখন লোকদের প্রাচীনদের সমাজ, প্রধান ইমামেরা আলেমরা একত্র হল এবং তাদের মাহ্ফিলের মধ্যে তাঁকে আনালো, আর বললো, তুমি যদি সেই মসীহ্ হও, তবে আমাদেরকে বল। 67তিনি তাদেরকে বললেন, যদি তোমাদেরকে বলি, তোমরা বিশ্বাস করবে না; 68আর যদি তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করি, কোন উত্তর দেবে না; 69কিন্তু এখন থেকে ইবনুল-ইনসান আল্লাহ্র পরাক্রমের ডান পাশে উপবিষ্ট থাকবেন। 70তখন সকলে বললো, তবে তুমি কি আল্লাহ্র পুত্র? তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরাই বলছো যে, আমি সেই। 71তখন তারা বললো, আর সাক্ষ্যে আমাদের কি প্রয়োজন? আমরা নিজেরাই তো এর মুখে শুনলাম।
Currently Selected:
:
Highlight
Share
Copy
Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in
Kitabul Muqaddas (BACIB) Copyright © Biblical Aids to Churches in Bangladesh, 2013