লূক 9
9
বারো জন সাহাবীকে তবলিগ করতে পাঠানো
1পরে তিনি সেই বারো জনকে একত্রে ডেকে তাঁদেরকে সমস্ত বদ-রূহ্র উপরে এবং রোগ ভাল করার জন্য শক্তি ও ক্ষমতা দিলেন; 2আর আল্লাহ্র রাজ্য তবলিগ করতে এবং রোগীদের সুস্থ করতে তাঁদেরকে প্রেরণ করলেন। 3আর তিনি তাঁদেরকে বললেন, পথের জন্য কিছুই নিও না, লাঠিও না, ঝুলিও না, খাদ্যও না, টাকাও না; দু’টা করে জামাও নিও না। 4আর তোমরা যে কোন বাড়িতে প্রবেশ কর, সেখানে থেকো এবং সেখান থেকে প্রস্থান করো। 5আর যেসব লোক তোমাদেরকে গ্রহণ না করে, সেই নগর থেকে প্রস্থান করার সময়ে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যের জন্য তোমাদের পায়ের ধুলা ঝেড়ে ফেলো। 6পরে তাঁরা প্রস্থান করে চারদিকে গ্রামে গ্রামে যেতে লাগলেন, সর্বত্র সুসমাচার তবলিগ করতে এবং সুস্থতা দান করতে লাগলেন।
বাদশাহ্ হেরোদের অস্থিরতা
7আর যা যা হচ্ছিল, বাদশাহ্ হেরোদ সমস্তই শুনতে পেলেন এবং তিনি বড় অস্থির হলেন, কারণ কেউ কেউ বলতো, ইয়াহিয়া মৃতদের মধ্য থেকে উঠেছেন। 8আর কেউ কেউ বলতো, ইলিয়াস দর্শন দিয়েছেন; আর কেউ কেউ বলতো, পূর্বকালীন নবীদের এক জন মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন। 9আর হেরোদ বললেন, আমিই তো ইয়াহিয়ার মাথা কেটে ফেলেছি; কিন্তু ইনি কে, যাঁর বিষয়ে এরকম কথা শুনতে পাচ্ছি? আর তিনি তাঁকে দেখবার চেষ্টা করতে লাগলেন।
পাঁচ হাজার লোককে আহার দেওয়া
10পরে প্রেরিতেরা যা যা করেছিলেন, ফিরে এসে তার বৃত্তান্ত ঈসাকে বললেন। আর তিনি তাঁদেরকে সঙ্গে নিয়ে গোপনে বৈৎসৈদা নামক নগরে গেলেন। 11কিন্তু লোকেরা তা জানতে পেরে তাঁর পিছনে পিছনে চললো, আর তিনি তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করে তাদের কাছে আল্লাহ্র রাজ্যের বিষয় কথা বললেন এবং যাদের সুস্থ হবার প্রয়োজন ছিল তাদেরকে সুস্থ করলেন।
12পরে দিবা অবসান হতে লাগল, আর সেই বারো জন কাছে এসে তাঁকে বললেন, আপনি এই লোকদেরকে বিদায় করুন, যেন এরা চারদিকে গ্রামে ও পাড়ায় গিয়ে রাত্রি যাপন করে ও খাদ্যদ্রব্য খুঁজে নেয়, কেননা এখানে আমরা নির্জন স্থানে আছি। 13কিন্তু তিনি তাঁদেরকে বললেন, তোমরাই এদেরকে আহার দাও। তাঁরা বললেন, পাঁচখানা রুটি ও দু’টি মাছ ছাড়া আমাদের কাছে কিছু নেই; তবে কি আমরা গিয়ে এ সব লোকের জন্য খাদ্য কিনে আনতে পারব? 14কারণ সেখানে অনুমান পাঁচ হাজার পুরুষ ছিল। তখন তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে বললেন, পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করে ওদেরকে সারি সারি বসিয়ে দাও। 15তাঁরা সেরকম করলেন, সকলকে বসিয়ে দিলেন। 16পরে তিনি সেই পাঁচখানা রুটি ও দু’টি মাছ নিয়ে আসমানের দিকে দৃষ্টি করে সেগুলোর জন্য আল্লাহ্কে শুকরিয়া জানালেন ও ভাঙ্গলেন; আর লোকদের সম্মুখে রাখার জন্য সাহাবীদেরকে দিতে লাগলেন। 17তাতে সকলে আহার করে তৃপ্ত হল এবং তারা যা অবশিষ্ট রাখল, সেসব গুঁড়াগাঁড়া কুড়ালে পর বারো ডালা হল।
হযরত পিতরের ঘোষণা
18একবার তিনি একাকী মুনাজাত করছিলেন, সাহাবীরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন; আর তিনি তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কে, এই বিষয়ে লোকেরা কি বলে? 19তাঁরা জবাবে বললেন, বাপ্তিস্মদাতা ইয়াহিয়া; কিন্তু কেউ কেউ বলে, আপনি ইলিয়াস, আর কেউ কেউ বলে, পূর্বকালীন নবীদের এক জন জীবিত হয়ে উঠেছেন। 20তখন তিনি তাঁদেরকে বললেন, কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে? পিতর জবাবে বললেন, আপনি আল্লাহ্র সেই মসীহ্।
ঈসা মসীহ্ তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন
21তখন তিনি তাঁদেরকে দৃঢ়ভাবে বলে দিলেন ও হুকুম করলেন, এই কথা কাউকেও বলো না; 22তিনি বললেন, ইবনুল-ইনসানকে অনেক দুঃখভোগ করতে হবে; প্রাচীনদের, প্রধান ইমামদের ও আলেমদের কর্তৃক অগ্রাহ্য হতে হবে এবং হত হতে হবে; আর তৃতীয় দিনে উঠতে হবে।
23আর তিনি সকলকে বললেন, কেউ যদি আমার পিছনে আসতে ইচ্ছা করে, তবে সে নিজেকে অস্বীকার করুক, প্রতিদিন আপন ক্রুশ তুলে নিক এবং আমার পিছনে আসুক। 24কেননা যে কেউ আপন প্রাণ রক্ষা করতে ইচ্ছা করে, সে তা হারাবে; কিন্তু যে কেউ আমার জন্য আপন প্রাণ হারায়, সে-ই তা রক্ষা করবে। 25কারণ মানুষ যদি সারা দুনিয়া লাভ করে নিজেকে নষ্ট করে, কিংবা হারায়, তবে তার কি লাভ হল? 26কেননা যে কেউ আমাকে ও আমার কালামকে লজ্জার বিষয় জ্ঞান করে, ইবনুল-ইনসান যখন নিজের প্রতাপে এবং পিতার ও পবিত্র ফেরেশতাদের প্রতাপে আসবেন, তখন তিনি তাকে লজ্জার বিষয় জ্ঞান করবেন। 27কিন্তু আমি তোমাদেরকে সত্যি বলছি, যারা এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাদের মধ্যে এমন কয়েক জন আছে, যারা, যে পর্যন্ত আল্লাহ্র রাজ্য দেখতে না পাবে, সেই পর্যন্ত কোন মতে মৃত্যুর আস্বাদ পাবে না।
ঈসা মসীহের রূপান্তর
28এসব কথা বলবার পরে অনুমান আট দিন গত হলে তিনি পিতর, ইউহোন্না ও ইয়াকুবকে সঙ্গে নিয়ে মুনাজাত করার জন্য পর্বতে উঠলেন। 29আর দেখ তিনি মুনাজাত করছেন, এমন সময়ে তাঁর মুখের দৃশ্য অন্য রকম হল এবং তাঁর পোশাক শুভ্র ও উজ্জ্বল হল। 30আর দেখ, দু’জন পুরুষ, মূসা ও ইলিয়াস, তাঁর সঙ্গে কথোপকথন করতে লাগলেন। 31তাঁরা সপ্রতাপে দেখা দিয়ে তাঁর সেই যাত্রার বিষয় কথা বলতে লাগলেন, যা তিনি জেরুশালেমে সমাপন করতে উদ্যত ছিলেন। 32তখন পিতর ও তাঁর সঙ্গীরা নিদ্রায় ভারাক্রান্ত ছিলেন, কিন্তু জেগে উঠে তাঁর মহিমা এবং ঐ দুই ব্যক্তিকে দেখলেন, যাঁরা তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন। 33পরে তাঁরা তাঁর কাছ থেকে প্রস্থান করছেন, এমন সময়ে পিতর ঈসাকে বললেন, প্রভু, এখানে আমাদের থাকা ভাল; আমরা তিনটি কুটির তৈরি করি; একটি আপনার জন্য, একটি মূসার জন্য, আর একটি ইলিয়াসের জন্য; কিন্তু তিনি কি বললেন, তা নিজেই বুঝতে পারলেন না। 34তিনি এই কথা বলছেন, এমন সময়ে একখানি মেঘ এসে তাঁদেরকে ছায়া করলো; তাতে তাঁরা সেই মেঘে প্রবেশ করলে এঁরা ভয় পেলেন। 35আর সেই মেঘ থেকে এই বাণী হল, ইনিই আমার পুত্র, আমার মনোনীত, এঁর কথা শোন। 36এই বাণী হবামাত্র সেখানে একা ঈসাকে দেখা গেল। আর তাঁরা নীরব রইলেন, যা যা দেখেছিলেন তার কিছুই সেই সময়ে কাউকেও জানালেন না।
ঈসা মসীহ্ একটি বালককে সুস্থ করেন
37পরদিন তাঁরা সেই পর্বত থেকে নেমে আসলে অনেক লোক তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলো। 38আর দেখ, ভিড়ের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি চিৎকার করে বললো, হুজুর, আরজ করি, আমার পুত্রের প্রতি দৃষ্টিপাত করুন, কেননা এটি আমার একমাত্র সন্তান। 39আর দেখুন, একটা রূহ্ একে আক্রমণ করে, আর এ হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠে। সেই রূহ্টি একে মুচড়ে ধরে, তাতে সে মুখ দিয়ে ফেনা বের করে, আর রূহ্টি তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে কষ্ট দিয়ে ছেড়ে যায়। 40আর আমি আপনার সাহাবীদেরকে নিবেদন করেছিলাম, যেন তাঁরা এটাকে ছাড়িয়ে দেন, কিন্তু তাঁরা পারলেন না। 41তখন জবাবে ঈসা বললেন, হে অবিশ্বাসী ও বিপথগামী বংশ, কত কাল আমি তোমাদের কাছে থাকব ও তোমাদের প্রতি সহিষ্ণুতা করবো? তোমার পুত্রকে এখানে আন। 42সে আসছে, এমন সময়ে ঐ বদ-রূহ্ তাকে ফেলে দিল ও ভয়ানক ভাবে মুচড়ে ধরলো। কিন্তু ঈসা সেই নাপাক রূহ্কে ধমক্ দিলেন, বালকটিকে সুস্থ করলেন ও তার পিতার কাছে তাকে ফিরিয়ে দিলেন। 43তখন সকলে আল্লাহ্র মহিমায় চমৎকৃত হল।
ঈসা মসীহ্ আবারও তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন
44আর তিনি যে সমস্ত কাজ করছিলেন, তাতে সকল লোক আশ্চর্য জ্ঞান করলে তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে বললেন, তোমরা এসব কথা মনযোগ দিয়ে শোন,; কেননা সমপ্রতি ইবনুল-ইনসানকে মানুষের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে। 45কিন্তু তাঁরা এই কথা বুঝলেন না এবং এর অর্থ তাঁদের থেকে গুপ্ত রাখা হল, যাতে তাঁরা বুঝে উঠতে না পারেন এবং তাঁর কাছে এই কথার বিষয় জিজ্ঞাসা করতে তাঁদের ভয় হল।
46আর তাঁদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, এই তর্ক তাঁদের মধ্যে উপস্থিত হল। 47তখন ঈসা তাঁদের হৃদয়ের তর্ক জেনে একটি শিশুকে নিয়ে তাঁর নিজের পাশে দাঁড় করালেন, 48এবং তাঁদেরকে বললেন, যে কেউ আমার নামে এই শিশুটিকে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে। যে কেউ আমাকে গ্রহণ করে, সে তাঁকেই গ্রহণ করে, যিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন; কারণ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সবচেয়ে ক্ষুদ্র, সেই মহান।
49পরে ইউহোন্না বললেন, প্রভু, আমরা এক ব্যক্তিকে আপনার নামে বদ-রূহ্ ছাড়াতে দেখেছিলাম, আর তাকে বারণ করছিলাম, কারণ সে আমাদের দলভুক্ত নয়। 50কিন্তু ঈসা তাঁকে বললেন, বারণ করো না, কেননা যে তোমাদের বিপক্ষ নয়, সে তোমাদের সপক্ষ।
সামেরিয়দের একটি গ্রাম ঈসা মসীহ্কে গ্রহণ করলেন না
51আর যখন তাঁর ঊর্ধ্বে নীত হবার সময় পূর্ণ হয়ে আসছিল, তখন তিনি একান্ত মনে জেরুশালেমে যেতে উন্মুখ হলেন, 52এবং তাঁর আগে দূতদেরকে প্রেরণ করলেন আর তাঁরা গিয়ে সামেরীয়দের কোন গ্রামে প্রবেশ করলেন, যাতে তাঁর জন্য আয়োজন করতে পারেন। 53কিন্তু লোকেরা তাঁকে গ্রহণ করলো না, কেননা তিনি জেরুশালেমে যেতে উন্মুখ ছিলেন। 54তা দেখে তাঁর সাহাবী ইয়াকুব ও ইউহোন্না বললেন, প্রভু, আপনি কি ইচ্ছা করেন যে, ইলিয়াস যেমন করেছিলেন, তেমনি আমরা বলি, আসমান থেকে আগুন নেমে এসে এদেরকে ভস্ম করে ফেলুক? 55কিন্তু তিনি মুখ ফিরিয়ে তাঁদেরকে ধমক দিলেন। 56পরে তাঁরা অন্য গ্রামে চলে গেলেন।
57তাঁরা পথে যাচ্ছেন, এমন সময়ে এক ব্যক্তি তাঁকে বললো, আপনি যে কোন স্থানে যাবেন, আমি আপনার পিছনে যাব। 58ঈসা তাকে বললেন, শিয়ালদের গর্ত আছে এবং আসমানের পাখিগুলোর বাসা আছে, কিন্তু ইবনুল-ইনসানের মাথা রাখার স্থান নেই। 59আর এক জনকে তিনি বললেন, আমাকে অনুসরণ কর। কিন্তু সে বললো, প্রভু, আগে আমার পিতাকে কবর দিয়ে আসতে অনুমতি দিন। 60তিনি তাকে বললেন, মৃতেরাই নিজ নিজ মৃতদের কবর দিক; কিন্তু তুমি গিয়ে আল্লাহ্র রাজ্য ঘোষণা কর। 61আর এক জন বললো, প্রভু, আমি আপনাকে অনুসরণ করবো, কিন্তু আগে নিজের বাড়ির লোকদের কাছে বিদায় নিয়ে আসতে অনুমতি দিন। 62কিন্তু ঈসা তাকে বললেন, যে কোন ব্যক্তি লাঙ্গলে হাত দিয়ে পিছনে ফিরে চায়, সে আল্লাহ্র রাজ্যের উপযুক্ত নয়।
Currently Selected:
লূক 9: BACIB
Highlight
Share
Copy
Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in
Kitabul Muqaddas (BACIB) Copyright © Biblical Aids to Churches in Bangladesh, 2013
লূক 9
9
বারো জন সাহাবীকে তবলিগ করতে পাঠানো
1পরে তিনি সেই বারো জনকে একত্রে ডেকে তাঁদেরকে সমস্ত বদ-রূহ্র উপরে এবং রোগ ভাল করার জন্য শক্তি ও ক্ষমতা দিলেন; 2আর আল্লাহ্র রাজ্য তবলিগ করতে এবং রোগীদের সুস্থ করতে তাঁদেরকে প্রেরণ করলেন। 3আর তিনি তাঁদেরকে বললেন, পথের জন্য কিছুই নিও না, লাঠিও না, ঝুলিও না, খাদ্যও না, টাকাও না; দু’টা করে জামাও নিও না। 4আর তোমরা যে কোন বাড়িতে প্রবেশ কর, সেখানে থেকো এবং সেখান থেকে প্রস্থান করো। 5আর যেসব লোক তোমাদেরকে গ্রহণ না করে, সেই নগর থেকে প্রস্থান করার সময়ে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যের জন্য তোমাদের পায়ের ধুলা ঝেড়ে ফেলো। 6পরে তাঁরা প্রস্থান করে চারদিকে গ্রামে গ্রামে যেতে লাগলেন, সর্বত্র সুসমাচার তবলিগ করতে এবং সুস্থতা দান করতে লাগলেন।
বাদশাহ্ হেরোদের অস্থিরতা
7আর যা যা হচ্ছিল, বাদশাহ্ হেরোদ সমস্তই শুনতে পেলেন এবং তিনি বড় অস্থির হলেন, কারণ কেউ কেউ বলতো, ইয়াহিয়া মৃতদের মধ্য থেকে উঠেছেন। 8আর কেউ কেউ বলতো, ইলিয়াস দর্শন দিয়েছেন; আর কেউ কেউ বলতো, পূর্বকালীন নবীদের এক জন মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন। 9আর হেরোদ বললেন, আমিই তো ইয়াহিয়ার মাথা কেটে ফেলেছি; কিন্তু ইনি কে, যাঁর বিষয়ে এরকম কথা শুনতে পাচ্ছি? আর তিনি তাঁকে দেখবার চেষ্টা করতে লাগলেন।
পাঁচ হাজার লোককে আহার দেওয়া
10পরে প্রেরিতেরা যা যা করেছিলেন, ফিরে এসে তার বৃত্তান্ত ঈসাকে বললেন। আর তিনি তাঁদেরকে সঙ্গে নিয়ে গোপনে বৈৎসৈদা নামক নগরে গেলেন। 11কিন্তু লোকেরা তা জানতে পেরে তাঁর পিছনে পিছনে চললো, আর তিনি তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করে তাদের কাছে আল্লাহ্র রাজ্যের বিষয় কথা বললেন এবং যাদের সুস্থ হবার প্রয়োজন ছিল তাদেরকে সুস্থ করলেন।
12পরে দিবা অবসান হতে লাগল, আর সেই বারো জন কাছে এসে তাঁকে বললেন, আপনি এই লোকদেরকে বিদায় করুন, যেন এরা চারদিকে গ্রামে ও পাড়ায় গিয়ে রাত্রি যাপন করে ও খাদ্যদ্রব্য খুঁজে নেয়, কেননা এখানে আমরা নির্জন স্থানে আছি। 13কিন্তু তিনি তাঁদেরকে বললেন, তোমরাই এদেরকে আহার দাও। তাঁরা বললেন, পাঁচখানা রুটি ও দু’টি মাছ ছাড়া আমাদের কাছে কিছু নেই; তবে কি আমরা গিয়ে এ সব লোকের জন্য খাদ্য কিনে আনতে পারব? 14কারণ সেখানে অনুমান পাঁচ হাজার পুরুষ ছিল। তখন তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে বললেন, পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করে ওদেরকে সারি সারি বসিয়ে দাও। 15তাঁরা সেরকম করলেন, সকলকে বসিয়ে দিলেন। 16পরে তিনি সেই পাঁচখানা রুটি ও দু’টি মাছ নিয়ে আসমানের দিকে দৃষ্টি করে সেগুলোর জন্য আল্লাহ্কে শুকরিয়া জানালেন ও ভাঙ্গলেন; আর লোকদের সম্মুখে রাখার জন্য সাহাবীদেরকে দিতে লাগলেন। 17তাতে সকলে আহার করে তৃপ্ত হল এবং তারা যা অবশিষ্ট রাখল, সেসব গুঁড়াগাঁড়া কুড়ালে পর বারো ডালা হল।
হযরত পিতরের ঘোষণা
18একবার তিনি একাকী মুনাজাত করছিলেন, সাহাবীরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন; আর তিনি তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কে, এই বিষয়ে লোকেরা কি বলে? 19তাঁরা জবাবে বললেন, বাপ্তিস্মদাতা ইয়াহিয়া; কিন্তু কেউ কেউ বলে, আপনি ইলিয়াস, আর কেউ কেউ বলে, পূর্বকালীন নবীদের এক জন জীবিত হয়ে উঠেছেন। 20তখন তিনি তাঁদেরকে বললেন, কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে? পিতর জবাবে বললেন, আপনি আল্লাহ্র সেই মসীহ্।
ঈসা মসীহ্ তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন
21তখন তিনি তাঁদেরকে দৃঢ়ভাবে বলে দিলেন ও হুকুম করলেন, এই কথা কাউকেও বলো না; 22তিনি বললেন, ইবনুল-ইনসানকে অনেক দুঃখভোগ করতে হবে; প্রাচীনদের, প্রধান ইমামদের ও আলেমদের কর্তৃক অগ্রাহ্য হতে হবে এবং হত হতে হবে; আর তৃতীয় দিনে উঠতে হবে।
23আর তিনি সকলকে বললেন, কেউ যদি আমার পিছনে আসতে ইচ্ছা করে, তবে সে নিজেকে অস্বীকার করুক, প্রতিদিন আপন ক্রুশ তুলে নিক এবং আমার পিছনে আসুক। 24কেননা যে কেউ আপন প্রাণ রক্ষা করতে ইচ্ছা করে, সে তা হারাবে; কিন্তু যে কেউ আমার জন্য আপন প্রাণ হারায়, সে-ই তা রক্ষা করবে। 25কারণ মানুষ যদি সারা দুনিয়া লাভ করে নিজেকে নষ্ট করে, কিংবা হারায়, তবে তার কি লাভ হল? 26কেননা যে কেউ আমাকে ও আমার কালামকে লজ্জার বিষয় জ্ঞান করে, ইবনুল-ইনসান যখন নিজের প্রতাপে এবং পিতার ও পবিত্র ফেরেশতাদের প্রতাপে আসবেন, তখন তিনি তাকে লজ্জার বিষয় জ্ঞান করবেন। 27কিন্তু আমি তোমাদেরকে সত্যি বলছি, যারা এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাদের মধ্যে এমন কয়েক জন আছে, যারা, যে পর্যন্ত আল্লাহ্র রাজ্য দেখতে না পাবে, সেই পর্যন্ত কোন মতে মৃত্যুর আস্বাদ পাবে না।
ঈসা মসীহের রূপান্তর
28এসব কথা বলবার পরে অনুমান আট দিন গত হলে তিনি পিতর, ইউহোন্না ও ইয়াকুবকে সঙ্গে নিয়ে মুনাজাত করার জন্য পর্বতে উঠলেন। 29আর দেখ তিনি মুনাজাত করছেন, এমন সময়ে তাঁর মুখের দৃশ্য অন্য রকম হল এবং তাঁর পোশাক শুভ্র ও উজ্জ্বল হল। 30আর দেখ, দু’জন পুরুষ, মূসা ও ইলিয়াস, তাঁর সঙ্গে কথোপকথন করতে লাগলেন। 31তাঁরা সপ্রতাপে দেখা দিয়ে তাঁর সেই যাত্রার বিষয় কথা বলতে লাগলেন, যা তিনি জেরুশালেমে সমাপন করতে উদ্যত ছিলেন। 32তখন পিতর ও তাঁর সঙ্গীরা নিদ্রায় ভারাক্রান্ত ছিলেন, কিন্তু জেগে উঠে তাঁর মহিমা এবং ঐ দুই ব্যক্তিকে দেখলেন, যাঁরা তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন। 33পরে তাঁরা তাঁর কাছ থেকে প্রস্থান করছেন, এমন সময়ে পিতর ঈসাকে বললেন, প্রভু, এখানে আমাদের থাকা ভাল; আমরা তিনটি কুটির তৈরি করি; একটি আপনার জন্য, একটি মূসার জন্য, আর একটি ইলিয়াসের জন্য; কিন্তু তিনি কি বললেন, তা নিজেই বুঝতে পারলেন না। 34তিনি এই কথা বলছেন, এমন সময়ে একখানি মেঘ এসে তাঁদেরকে ছায়া করলো; তাতে তাঁরা সেই মেঘে প্রবেশ করলে এঁরা ভয় পেলেন। 35আর সেই মেঘ থেকে এই বাণী হল, ইনিই আমার পুত্র, আমার মনোনীত, এঁর কথা শোন। 36এই বাণী হবামাত্র সেখানে একা ঈসাকে দেখা গেল। আর তাঁরা নীরব রইলেন, যা যা দেখেছিলেন তার কিছুই সেই সময়ে কাউকেও জানালেন না।
ঈসা মসীহ্ একটি বালককে সুস্থ করেন
37পরদিন তাঁরা সেই পর্বত থেকে নেমে আসলে অনেক লোক তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলো। 38আর দেখ, ভিড়ের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি চিৎকার করে বললো, হুজুর, আরজ করি, আমার পুত্রের প্রতি দৃষ্টিপাত করুন, কেননা এটি আমার একমাত্র সন্তান। 39আর দেখুন, একটা রূহ্ একে আক্রমণ করে, আর এ হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠে। সেই রূহ্টি একে মুচড়ে ধরে, তাতে সে মুখ দিয়ে ফেনা বের করে, আর রূহ্টি তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে কষ্ট দিয়ে ছেড়ে যায়। 40আর আমি আপনার সাহাবীদেরকে নিবেদন করেছিলাম, যেন তাঁরা এটাকে ছাড়িয়ে দেন, কিন্তু তাঁরা পারলেন না। 41তখন জবাবে ঈসা বললেন, হে অবিশ্বাসী ও বিপথগামী বংশ, কত কাল আমি তোমাদের কাছে থাকব ও তোমাদের প্রতি সহিষ্ণুতা করবো? তোমার পুত্রকে এখানে আন। 42সে আসছে, এমন সময়ে ঐ বদ-রূহ্ তাকে ফেলে দিল ও ভয়ানক ভাবে মুচড়ে ধরলো। কিন্তু ঈসা সেই নাপাক রূহ্কে ধমক্ দিলেন, বালকটিকে সুস্থ করলেন ও তার পিতার কাছে তাকে ফিরিয়ে দিলেন। 43তখন সকলে আল্লাহ্র মহিমায় চমৎকৃত হল।
ঈসা মসীহ্ আবারও তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন
44আর তিনি যে সমস্ত কাজ করছিলেন, তাতে সকল লোক আশ্চর্য জ্ঞান করলে তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে বললেন, তোমরা এসব কথা মনযোগ দিয়ে শোন,; কেননা সমপ্রতি ইবনুল-ইনসানকে মানুষের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে। 45কিন্তু তাঁরা এই কথা বুঝলেন না এবং এর অর্থ তাঁদের থেকে গুপ্ত রাখা হল, যাতে তাঁরা বুঝে উঠতে না পারেন এবং তাঁর কাছে এই কথার বিষয় জিজ্ঞাসা করতে তাঁদের ভয় হল।
46আর তাঁদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, এই তর্ক তাঁদের মধ্যে উপস্থিত হল। 47তখন ঈসা তাঁদের হৃদয়ের তর্ক জেনে একটি শিশুকে নিয়ে তাঁর নিজের পাশে দাঁড় করালেন, 48এবং তাঁদেরকে বললেন, যে কেউ আমার নামে এই শিশুটিকে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে। যে কেউ আমাকে গ্রহণ করে, সে তাঁকেই গ্রহণ করে, যিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন; কারণ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সবচেয়ে ক্ষুদ্র, সেই মহান।
49পরে ইউহোন্না বললেন, প্রভু, আমরা এক ব্যক্তিকে আপনার নামে বদ-রূহ্ ছাড়াতে দেখেছিলাম, আর তাকে বারণ করছিলাম, কারণ সে আমাদের দলভুক্ত নয়। 50কিন্তু ঈসা তাঁকে বললেন, বারণ করো না, কেননা যে তোমাদের বিপক্ষ নয়, সে তোমাদের সপক্ষ।
সামেরিয়দের একটি গ্রাম ঈসা মসীহ্কে গ্রহণ করলেন না
51আর যখন তাঁর ঊর্ধ্বে নীত হবার সময় পূর্ণ হয়ে আসছিল, তখন তিনি একান্ত মনে জেরুশালেমে যেতে উন্মুখ হলেন, 52এবং তাঁর আগে দূতদেরকে প্রেরণ করলেন আর তাঁরা গিয়ে সামেরীয়দের কোন গ্রামে প্রবেশ করলেন, যাতে তাঁর জন্য আয়োজন করতে পারেন। 53কিন্তু লোকেরা তাঁকে গ্রহণ করলো না, কেননা তিনি জেরুশালেমে যেতে উন্মুখ ছিলেন। 54তা দেখে তাঁর সাহাবী ইয়াকুব ও ইউহোন্না বললেন, প্রভু, আপনি কি ইচ্ছা করেন যে, ইলিয়াস যেমন করেছিলেন, তেমনি আমরা বলি, আসমান থেকে আগুন নেমে এসে এদেরকে ভস্ম করে ফেলুক? 55কিন্তু তিনি মুখ ফিরিয়ে তাঁদেরকে ধমক দিলেন। 56পরে তাঁরা অন্য গ্রামে চলে গেলেন।
57তাঁরা পথে যাচ্ছেন, এমন সময়ে এক ব্যক্তি তাঁকে বললো, আপনি যে কোন স্থানে যাবেন, আমি আপনার পিছনে যাব। 58ঈসা তাকে বললেন, শিয়ালদের গর্ত আছে এবং আসমানের পাখিগুলোর বাসা আছে, কিন্তু ইবনুল-ইনসানের মাথা রাখার স্থান নেই। 59আর এক জনকে তিনি বললেন, আমাকে অনুসরণ কর। কিন্তু সে বললো, প্রভু, আগে আমার পিতাকে কবর দিয়ে আসতে অনুমতি দিন। 60তিনি তাকে বললেন, মৃতেরাই নিজ নিজ মৃতদের কবর দিক; কিন্তু তুমি গিয়ে আল্লাহ্র রাজ্য ঘোষণা কর। 61আর এক জন বললো, প্রভু, আমি আপনাকে অনুসরণ করবো, কিন্তু আগে নিজের বাড়ির লোকদের কাছে বিদায় নিয়ে আসতে অনুমতি দিন। 62কিন্তু ঈসা তাকে বললেন, যে কোন ব্যক্তি লাঙ্গলে হাত দিয়ে পিছনে ফিরে চায়, সে আল্লাহ্র রাজ্যের উপযুক্ত নয়।
Currently Selected:
:
Highlight
Share
Copy
Want to have your highlights saved across all your devices? Sign up or sign in
Kitabul Muqaddas (BACIB) Copyright © Biblical Aids to Churches in Bangladesh, 2013