পবিএ বাইবেল O.V.

ঈশ্বর নোহ এবং তাঁর পুত্রদের আশীর্বাদ করে বললেন, তোমরা প্রজাবন্ত হও এবং বৃদ্ধিলাভ করে পৃথিবী পরিপূর্ণ কর। পৃথিবীর সকল পশু, আকাশের সকল পাখী, ভূচর যাবতীয় সরীসৃপ ও সমুদ্রের মৎস্যকুল তেমাদের ভয়ে ভীত ও সন্ত্রস্ত হবে। তোমাদের হাতেই তাদের সকলকে সমর্পণ করা হয়েছে। সঞ্চরণশীল সমস্ত প্রাণীই হবে তোমাদের ভক্ষ্য। হরিৎ উদ্ভিদ্‌রাজির মত সেগুলিও আমি তোমাদের দিলাম। কেবল তোমরা কাঁচা মাংস অর্থাৎ রক্তসমেত মাংস ভক্ষণ করো না। কারণ রক্তই জীবন। তোমাদের রক্তপাত ও জীবনহানির প্রতিশোধ আমি অবশ্যই নেব। কোন পশু যদি মানুষের রক্তপাত ঘটায়, আমি তার প্রতিশোধ নেব এবং মানুষের ক্ষেত্রে কেউ যদি অন্যের জীবনহানি করে তবে আমি তারও প্রতিশোধ নেব। মানুষের রক্তপাত যে করবে তারও রক্তপাত হবে মানুষের হাতে কারণ ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হয়েছে মানুষ। তোমরা প্রজাবন্ত হও, বৃদ্ধিলাভ কর, প্রচুর সন্তান লাভ করে পৃথিবীতে আধিপত্য কর।
ঈশ্বর নোহ ও তাঁর পুত্রদের আরও বললেন, দেখ, তোমাদের ও তোমাদের ভাবী বংশধরদের সঙ্গে এবং যাবতীয় প্রাণী, পাখি, গৃহপালিত ও বন্যপশু — পৃথিবীর যত প্রাণী তোমাদের সঙ্গে জাহাজ থেকে বেরিয়ে এসেছে, তাদের সঙ্গে আমি এক সন্ধি চুক্তি স্থাপন করব। তার শর্ত হবে এই যে, আর কখনো জলপ্লাবনে সমস্ত প্রাণী বিনষ্ট হবে না এবং আর কখনো পৃথিবীবিধ্বংসী প্লাবন হবে না। ঈশ্বর আরও বললেন, তোমাদের ও তোমাদের সঙ্গে যত প্রাণী আছে তাদের সঙ্গে পুরুষানুক্রমে স্থায়ী যে সন্ধি চুক্তি আমি স্থাপন করলাম, তার নিদর্শন হবে এইঃ আকাশের গায়ে আমি আমার ধনু স্থাপন করব, আর তা-ই হব পৃথিবীর সঙ্গে স্থাপিত আমার সন্ধি চুক্তির প্রতীক। যখন আমি পৃথিবীর উপরে মেঘসঞ্চার করব তখন মেঘের গায়ে সেই ধনু দেখা যাবে। আর তখনই আমি তোমাদের এবং সকল জাতের জীবজন্তুর সঙ্গে স্থাপিত সন্ধিচুক্তির কথা স্মরণ করব এবং সর্বজীব বিধ্বংসী প্লাবন আর হবে না। মেঘের গায়ে সেই ধনু দেখা দিলে আমি তার দিকে দৃষ্টিপাত করব আর পৃথিবীতে সকল জাতের প্রাণীর সঙ্গে ঈশ্বরের চিরস্থায়ী যে সন্ধিচুক্তি স্থাপিত হয়েছে, তার কথা স্মরণ করব। ঈশ্বর নোহকে বললেন, পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর সঙ্গে স্থাপিত আমার সন্ধি চুক্তির এইটিই হবে নিদর্শন।

জাহাজ থেকে নোহের যে পুত্রেরা বেরিয়ে এসেছিল তাদের নাম শেম, হাম ও যাফত। হাম ছিল কনানের পিতা। নোহের এই তিনটিই পুত্র ছিল, এঁদের বংশধরদের দ্বারাই পৃথিবী প্রজাবন্ত হয়েছিল।
নোহ ছিলেন কৃষিজীবী। তিনিই সর্বপ্রথম দ্রাক্ষা উদ্যান রচনা করেছিলেন। একদিন তিনি দ্রাক্ষারস পান করে মত্ত হয়ে নগ্ন অবস্থায় তাঁবুর মধ্যে পড়েছিলেন। কনানের পিতা হাম তাঁর পিতাকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখে বাইরে গিয়ে তার দুই ভাইকে সে কথা জানাল। শেম ও যাফত তখন নিজেদের কাধে বস্ত্র নিয়ে পিছনে হেঁটে পিতার কাছে গিয়ে তাঁর দেহ ঢেকে দিল। বিপরীত দিকে মুখ করে থাকায় তারা পিতার বিবস্ত্র অবস্থা দেখল না। সুরার নেশা কেটে যাওয়ার পর নোহ তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রের আচরণের কথা জানতে পারলেন। তখন তিনি বললেন,
‘অভিশপ্ত হোক কনান,
সে হবে তার ভ্রাতাদের দাসানুদাস।’
তিনি আরও বললেন,
ধন্য প্রভু, শেম-এর আরাধ্য ঈশ্বর,
কনান হোক তার দাস।
যাফতকে ঈশ্বর করুন বর্ধিষ্ণু
শেম-এর শিবিরে সে করুক বসতি
আর কনান হোক তার দাস।’
প্লাবনের পরে নোহ তিনশো পঞ্চাশ বছর জীবিত ছিলেন। মৃত্যুকালে নোহের বয়স হয়েছিল নয়শো পঞ্চাশ বছর।

Słuchaj আদিপুস্তক 9