পবিএ বাইবেল O.V.

অব্রাহাম কেটুরা নামে আর একজন নারীকে পত্নীরূপে গ্রহণ করলেন। তাঁর গর্ভে জিমরান, যক্‌ষন,মদান, মিদিয়ন, যিশবাক ও গুহা নামে অব্রাহামের অন্যান্য সন্তানেরা জন্মগ্রহণ করল। যক্‌ষনের পুত্র শেবা ও দদান। আশুরী, লাটুশী ও লিয়ুম্মি উপজাতির লোকেরা দদানের বংশধর। এফা, এফের, হানোক, অবিদা ও এল্‌দায়া—এরা হল মিদিয়নের সন্তান। এদের, সকলেরই আদি মাতা ছিলেন কেটুরা। অব্রাহাম তাঁর সমস্ত সম্পত্তি ইস্‌হাককে দান করলেন। অব্রাহাম তাঁর জীবদ্দশাতেই তাঁর উপপত্নীদের সন্তানদের বিভিন্ন দানসামগ্রী দিয়ে ইস্‌হাকের কাছ থেকে পৃথক করে পূর্বাঞ্চলের দিকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

অব্রাহাম একশো পঁচাত্তর বছর জীবিত ছিলেন। বৃদ্ধ অবস্থায় পূর্ণ পরিণত বয়সে অব্রাহাম ইহলোক ত্যাগ করে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে মিলিত হলেন। তাঁর পুত্র ইস্‌হাক ও ইশ্মায়েল মাম্রের পূর্ব দিকে হিত্তীয় উপজাতির লোক সোহরের পুত্র এফ্রোণের জমিতে, মক্‌পেলা গুহায় অব্রাহামকে সমাধিস্থ করলেন। অব্রাহাম হিত্তীয় উপজাতির লোকদের কাছ থেকে ঐ জমি কিনে নিয়েছিলেন। এখানেই অব্রাহাম ও তাঁর স্ত্রী সারার কবর দেওয়া হয়। অব্রাহামের মৃত্যুর পর ঈশ্বর তাঁর পুত্র ইস্‌হাককে আশীর্বাদ করলেন আর ইসহাক বের-লাহয়-রোয়ীর কাছে বসবাস করতে লাগলেন।


অব্রাহামের পুত্র ইশ্মায়েলের বংশ তালিকা নিম্নরূপ: সারার মিশরী দাসী হাগারের গর্ভে অব্রাহামের এই সন্তানের জন্ম হয়। জন্মের ক্রম অনুসারে ইশ্মায়েলের সন্তানদের নাম-ইশ্মায়েলের জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রবায়োৎ, তারপর কেদার, আদ্‌বেল, মিব্‌সাম, মিস্‌মা, দুমা, মাসা, হাদাদ, তেমা, যেতুর, নাফিশ ও কেদেমা। এরা সকলেই ইশ্মায়েলের সন্তান, এদের বারোজন কুলপতি পল্লীনিবাস ও শিবির সংস্থান অনুযায়ী এদের পরিচয় উক্তরূপ। ইশ্মায়েল একশো সাঁইত্রিশ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং পূর্বপুরুষের সঙ্গে মিলিত হন। তাঁর বংশধরগণ হবীলা থেকে আরম্ভ করে আসিরিয়ার দিকে মিশরের পূর্বে শূর পর্যন্ত এলাকায় বসতি স্থাপন করল। তারা জ্ঞাতিভাইদের কাছ থেকে দূরে বসবাস করত।

অব্রাহামের পুত্র ইস্‌হাকের বংশতালিকা নিম্নরূপ: ইস্‌হাকের পিতা অব্রাহাম। চল্লিশ বছর বয়সে ইসহাক অরামনিবাসী বথুয়েলের কন্যা ও লাবণের ভগিনী রেবেকাকে পদ্দন-অরাম থেকে আনিয়ে বিবাহ করেছিলেন। বথুয়েল ও লাবণ ছিলেন অরামী জাতির লোক। ইস্‌হাকের স্ত্রী বন্ধ্যা হওয়ায় তিনি তাঁর জন্য প্রভু পরমেশ্বরের কাছে বিনতি করলেন। প্রভু পরমেশ্বর তাঁর বিনতি গ্রাহ্য করলেন, তাঁর স্ত্রী রেবেকা গর্ভবতী হলেন। তাঁর গর্ভে যমজ সন্তান এল। কিন্তু গর্ভমধ্যেই তাদের বিরোধ শুরু হয়ে গেল। রেবেকা বললেন, এই যদি অবস্থা হয় তবে আমার বেঁচে থেকে কি লাভ? তিনি প্রভু পরমেশ্বরের কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলেন। প্রভু তাঁকে বললেন,
তোমার গর্ভে রয়েছে দুটি জাতি,
তোমার গর্ভজাত এই দুই জাতি
পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে,
একজাতি হবে অন্যের চেয়ে শক্তিমান,
আর জ্যৈষ্ঠ হবে কনিষ্ঠের দাস।
পরে তাঁর গর্ভকাল সম্পূর্ণ হলে দেখা গেল, তাঁর গর্ভে যমজ সন্তান রয়েছে। প্রথমে যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হল সে রক্তবর্ণ। তার সর্বাঙ্গ পশমের জামার মত লোমে আবৃত ছিল। তার নাম রাখা হল এষৌ। পরে তার ভাই ভূমিষ্ঠ হল, তার হাত এষৌর পায়ের গোড়ালি ধরে ছিল, তাই তার নাম রাখা হল যাকোব (চরণধারী)। ইস্‌হাকের ষাট বছর বয়সে এই দুই পুত্রের জন্ম হয়।

শিশু দুটি বড় হলে, এষৌ হলেন নিপুণ শিকারী ও প্রান্তরবাসী। কিন্তু যাকোব ছিলেন শান্তশিষ্ট, তিনি তাঁবুতেই থাকতেন। ইস্‌হাক এষৌকে বেশি ভালবাসতেন কারণ তাঁর শিকার করে আনা পশুর মাংস তিনি খেতেন। কিন্তু রেবেকা ভালবাসতেন যাকোবকে। একদিন যাকোব ডাল রান্না করছিলেন, এমন সময়ে এষৌ প্রান্তর থেকে ক্ষুধা তৃষ্ণায় ক্লান্ত হয়ে ফিরলেন। তিনি যাকোবকে বললেন ঐ লাল রঙের সুপ আমাকে খেতে দাও, আমি বড় ক্ষুধিত। এই কারণেই তাঁর নাম হল ইদোম (লাল)।
যাকোব তাঁকে বললেন, আগে তুমি আমার আছে তোমার জ্যেষ্ঠ পুত্রের অধিকার বিক্রি কর। এষৌ বললেন, দেখ আমি মরতে চলেছি, জন্মগত অধিকার নিয়ে আমি কি করব? যাকোব বললেন, তাহলে আজ তুমি আমার কাছে শপথ কর। এষৌ তাঁর কাছে শপথ করে নিজের জন্মস্বত্ব যাকোবের কাছে বিক্রি করে দিলেন। যাকোব তখন এষৌকে রুটি ও মসুর ডাল খেতে দিলেন। খাওয়াদাওয়া সেরে এষৌ চলে গেলেন। এইভাবেই এষৌ তাঁর উত্তরাধিকার অবহেলা করলেন।

Slušaj আদিপুস্তক 25