পবিএ বাইবেল O.V.

ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির কাজ আরম্ভ করলেন। সেইরকম পৃথিবী ছিল বিশৃঙ্খল। সেখানে প্রাণের চিহ্নমাত্র ছিল না। সুগভীর জলধি ছিল তমসাবৃত। জলধির উপরে বিরাজিত ছিল ঈশ্বরের সক্রিয় শক্তি। ঈশ্বর বললেন, দীপ্তি হোক! দীপ্তির হল আবির্ভাব। ঈশ্বর দেখলেন, চমৎকার এই দীপ্তি। অন্ধকার থেকে তিনি দীপ্তিকে পৃথক করলেন এবং দীপ্তির নাম দিন ও অন্ধকারের নাম রাখলেন রাত্রি। রাত্রি ও দিনের অবসানে সমাপ্ত হল প্রথম দিবস।
ঈশ্বর বললেন, সৃষ্ট হোক নভোমণ্ডল, বিভক্ত করুক জলরাশিকে! ঈশ্বর এইভাবে নভোমণ্ডল সৃষ্টি করে তার ঊর্ধ্বস্থিত জলরাশি থেকে নিম্নস্থ জলরাশিকে পৃথক করলেন। ঈশ্বর সেই নভোমণ্ডলের নাম রাখলেন আকাশ। রাত্রি ও দিনের অবসান হল। সমাপ্ত হল দ্বিতীয় দিবস।
ঈশ্বর বললেন, আকাশের নীচে সমস্ত জলরাশি এক স্থানে সংহত হোক, প্রকাশিত হোক শুষ্ক ভূমি ! ঠিক তেমনি ঘটল ।
ঈশ্বর শুষ্ক ভূমির নাম স্থল ও সংহত জলরাশির নাম রাখলেন সমুদ্র । ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার। তিনি বললেন স্থলভূমিতে উৎপন্ন হোক উদ্ভিদ । উৎপন্ন হোক বিভিন্ন শ্রেণীর শস্য এবং বিভিন্ন শ্রেণীর সবীজ ফলদায়ী বৃক্ষ । ঠিক তেমনই ঘটল। পৃথিবী তৃণরাজি, বিভিন্ন শ্রেণীর ফলদায়ী বৃক্ষ উৎপন্ন করল । ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার । রাত্রি ও দিনের অবসান হল । সমাপ্ত হল তৃতীয় দিবস ।
ঈশ্বর বললেন, রাত্রি থেকে দিনকে পৃথক করার জন্য আকাশ মন্ডলে সৃষ্ট হোক জ্যোতিষ্করাজি । সেগুলি দিন, ঋতু ও বর্ষের সূচনা করবে ।
পৃথিবীতে আলোক বিতরণের জন্য সেগুলি আকাশে প্রতিষ্ঠিত হোক আলোকবর্তিকারূপে ! ঠিক তেমনই ঘটল । ঈশ্বর দিনে আলো দেবার জন্য সূর্য এবং রাত্রে আলো দেবার জন্য চন্দ্র—এই দুই বৃহৎ জ্যোতিষ্ক এবং নক্ষত্ররাজিও সৃষ্টি করলেন।
পৃথিবীতে আলোক বিতরণ, দিন ও রাত্রির নিয়ন্ত্রণ এবং অন্ধকার থেকে আলোককে পৃথক করার জন্য ঈশ্বর ঐ জ্যোতিষ্করাজিকে আকাশমন্ডলে স্থাপন করলেন। ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার । রাত্রি ও দিনের অবসান হল । সমাপ্ত হল চতুর্থ দিবস ।
ঈশ্বর বললেন, জলরাশি পূর্ণ হোক নানা জাতির জলচর প্রাণীতে এবং পৃথিবীর উপরে আকাশে উড়ে বেড়াক পক্ষীকুল । ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন বৃহদাকার সামুদ্রিক জীব এবং বিভিন্ন শ্রেণীর জলচর প্রাণী । তারা দলে দলে জলধিবক্ষে বিচরণ করতে লাগল । তিনি সৃষ্টি করলেন বিভিন্ন জাতির পক্ষীকুল । ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার । তিনি তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, তোমরা বংশ বিস্তার কর ও সংখ্যায় বৃদ্ধিলাভ করে সমুদ্রের জলরাশি পূর্ণ কর এবং পৃথিবীতে পক্ষীকুলের সংখ্যাবৃদ্ধি হোক । রাত্রি ও দিনের অবসান হল । সমাপ্ত হল পঞ্চম দিবস ।
ঈশ্বর বললেন, পৃথিবী বিভিন্ন জাতির প্রাণী— বন্য ও গৃহপালিত পশু এবং সরীসৃপ উৎপন্ন করুক । তেমনই ঘটল । ঈশ্বর এইভাবে বিভিন্ন জাতির বন্য ও গৃহপালিত পশু এবং বিভিন্ন জাতির ভূচর প্রাণী ও সরীসৃপ সৃষ্টি করলেন । ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার । তারপর ঈশ্বর বললেন, এস, আমরা মানুষ সৃষ্টি করি । তারা হোক আমাদের মত । তারা যাবতীয় পশু, সমুদ্রের মৎস্যকুল, আকাশের পাখী, ভূচর সরীসৃপ তথা সমস্ত পৃথিবীর তত্ত্বাবধান করবে। তখন ঈশ্বর আপন সাদৃশ্যে মানুষ সৃষ্টি করলেন । ঐশ্বরিক সাদৃশ্যে নর ও নারীরূপে তাদের তিনি গড়লেন।
তারপর ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, তোমাদের বংশবৃদ্ধি হোক ! তোমরা পৃথিবীকে পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর এবং সমুদ্রের মৎস্যকুল, আকাশের পক্ষীকুল এবং পৃথিবীতে বিচরণশীল সমস্ত প্রাণীকে প্রতিপালন কর ।
ঈশ্বর আরও বললেন দেখ, পৃথিবীতে সর্বপ্রকার উদ্ভিদ, শস্য ও সমস্ত সবীজ ফলদায়ী বৃক্ষ—সবই আমি তোমাদের দিলাম। সবই হবে তোমাদের খাদ্য । সকল ভূচর পশু, আকাশের সমস্ত পাখি ও পৃথিবীতে সকল বিচরণশীল সরীসৃপ এবং সমস্ত প্রাণীর খাদ্যের জন্য হরিৎ উদ্ভিদসমূহ দিলাম । ঠিক তেমনই ঘটল । ঈশ্বর তাঁর সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর উপর দৃষ্টিপাত করলেন, দেখলেন, সকলই উত্তম । রাত্রি ও দিনের অবসান হল । সমাপ্ত হল ষষ্ঠ দিবস ।

Makinig sa আদিপুস্তক 1