পবিএ বাইবেল O.V.

Bengali - Old Version BSI (NT) Drama

এই ঘটনার পর ইহুদীদের কোন এক পর্ব উপলক্ষে যীশু গেলেন জেরুশালেমে। সেখানে মেষদ্বারের পাশে একটি পুকুর ছিল। পুকুরটির পাঁচটি ঘাট। হিব্রু ভাষায় এটিকে বলা হত বেথসাথা। ঐ বাঁধান ঘাটগুলিকে প্রচুর অসুস্থ, অন্ধ, খঞ্জ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষ ভীড় করে শুয়ে থাকত। (পুকুরে জলকম্পনের অপেক্ষায় তারা থাকত। কারণ মাঝে মাঝে স্বর্গদূত নেমে এসে ঐ পুকুরের জলে আলোড়ন তুলতেন। এই আলোড়নের সময় প্রথমে যে জলে নামতে পারত, তার যে কোন রোগ থাক না কেন সে সুস্থ হয়ে যেত।) এদের মধ্যে একটি লোক ছিল, আটত্রিশ বছর ধরে রোগে পঙ্গু হয়ে ছিল। যীশু তাকে যখন দেখলেন এবং জানতে পারলেন যে বহুদিন ধরে সে অসুস্থ, তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি সুস্থ হতে চাও? সে উত্তর দিল, মহাশয়, আমার কেউ নেই, যে জল নড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমায় পুকুরে নামিয়ে দেবে। আমি যেতে যেতেই আমার আগে কেউ না কেউ জলে নেমে পড়ে। যীশু তাকে বললেন, উঠে দাঁড়াও। তোমার বিছানা নিয়ে চলে যাও। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি সুস্থ হয়ে গেল এবং নিজের বিছানা নিয়ে হাঁটতে আরম্ভ করল।
সেদিন ছিল সাব্বাথ দিন। যে লোকটি সুস্থ হয়েছিল, তাকে ইহুদী নেতারা বলল, আজ সাব্বাথ দিন। আজ তোমার বিছানা বয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। সে বলল, যিনি আমাকে সুস্থ করেছেন, তিনিই বলেছেন, ‘তোমার বিছানা নিয়ে চলে যাও’। তারা তাকে জিজ্ঞাসা করল, কে সেই ব্যক্তি, যে তোমাকে বিছানা নিয়ে চলে যেতে বলেছে? সেই লোকটি কিন্তু যীশুকে চিনত না এবং সেখানে খুব ভীড় থাকায় যীশুও সেখান থেকে সরে গিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পরে যীশু তাকে মন্দিরের মধ্যে দেখতে পেয়ে বললেন, এবার তুমি সুস্থ হয়েছ। পাপের পথ ত্যাগ কর নইলে তোমার অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ হবে। লোকটি তখন ইহুদীদের কাছে গিয়ে বলল, যীশুই তাকে সুস্থ করেছেন। সাব্বাথ দিনে এ ধরণের কাজ করায় ইহুদীরা যীশুকে নানাভাবে নিগ্রহ করতে লাগল। কিন্তু যীশু তাদের বললেন, আমার পিতা সদাসর্বদা কর্মরত তাই আমিওকাজ করছি। এ কথায় ইহুদীরা তাঁকে হত্যা করার জন্য আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠল। তিনি যে সাব্বাথ দিন ভঙ্গ করেছিলেন শুধু এজন্য নয়, তিনি ঈশ্বরকে নিজের পিতা বলে পরিচয় দিয়েছিলেন এবং নিজেকে ঈশ্বরের সমতুল্যরূপে দাবী করেছিলেন, এই ছিল তাঁর বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ।

এই অভিযোগের উত্তরে যীশু বললেন, সত্যি সত্যিই আমি তোমাদের বলছি যে, পুত্র নিজে থেকে কিছুই করতে পারেন না, পিতাকে যা করতে দেখেন, তাই-ই করেন তিনি। পিতা যা করেন, পুত্রও তাই করেন। কারণ পিতা পুত্রকে ভালবাসেন এবং তাঁর সমস্ত কর্মই তিনি তাঁর কাছে প্রকাশ করেন। এর চেয়েও আরও মহত্তর কর্ম তিনি তাঁর কাছে প্রকাশ করবেন, যা দেখে তোমরা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যাবে। পিতা যেমন মৃতকে জীবন দান করেন, পুত্রও তেমনি যাকে ইচ্ছা তাকে জীবন দান করবেন। আরও বলি, পিতা কারও বিচার করেন না, বিচারের ভার সম্পূর্ণরূপে তিনি পুত্রকেই দান করেছেন। তাঁর ইচ্ছা এই যে, সকলে যেন পিতার মত পুত্রকেও সম্মান করে। পুত্রকে যে মান্য করবে না সে তাঁর প্রেরণ কর্তা পিতাকেও অমান্য করবে।
একান্ত সত্য কথাই আমি বলছি যে, আমার কথা যে শুনবে, যিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন তাঁর উপরে যে বিশ্বাস অর্পণ করবে সে লাভ করবে শাশ্বত জীবন। বিচারের সম্মুখীন সে হবে না। মৃত্যু থেকে সে উত্তীর্ণ হয়েছে জীবনে। সত্যিই আমি তোমাদের বলছি, সেই সময় আসছে, প্রকৃতপক্ষে এসে গেছে, যখন মৃতেরাও ঈশতনয়ের বাণী শুনবে, যারা শুনবে তারা সকলেই জীবনলাভ করবে। কারণ পিতা স্বয়ং যেমন জীবনের উৎস, তেমনি পুত্রকেও তিনি জীবনের উৎসস্বরূপ করেছেন। মানবপুত্ররূপে বিচারের অধিকারও তিনি তাঁকে দিয়েছেন। এতে আশ্চর্য হয়ো না কারণ সেই সময় আসছে যখন সমাধিশয্যায় শায়িত সকলে তাঁর কন্ঠস্বর শুনে বেরিয়ে আসবে বাইরে। যারা সৎকর্ম করেছে তাদের পুনরুত্থান হবে জীবনে উত্তরণের জন্য। আর যারা দুষ্কর্ম করেছে যারা পুনরুত্থিত হবে দণ্ডাজ্ঞার জন্য।
আমি নিজে কিছুই করতে পারি না। যেমন প্রত্যাদেশ লাভ করি তেমনই আমি বিচার করি। আমার বিচার ন্যায্যা, কারণ আমি নিজের ইচ্ছা নয় কেবল যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁরই ইচ্ছা পালন করি। আমি যদি নিজেই নিজের সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিই তাহলে তা সত্য বলে স্বীকৃত হবে না। কিন্তু আমার আর একজন সাক্ষী আছেন। আমি জানি, আমা্র সম্বন্ধে তাঁর সাক্ষ্য সত্য। যোহনের কাছেও তোমরা লোক পাঠিয়েছিলে, তিনিও সত্য সাক্ষ্যই দিয়েছিলেন। মানুষের সাক্ষ্যের উপরেই যে আমি নির্ভর করি তা নয়। কিন্তু তোমরা যাতে উদ্ধার পাও সেইজন্যই এসব কথা আমি বলছি। যোহন ছিলেন দীপ্ত প্রদীপ শিষ্য। তাঁর উজ্জ্বল আলোকে তোমরা কিছুক্ষণ আনন্দ করতে চেয়েছিলে। কিন্তু যোহনের সাক্ষ্যের চেয়েও মহত্তর সাক্ষ্য আমার পক্ষে আছে। পিতা যে সমস্ত কাজের ভার আমার উপর অর্পণ করেছেন, যে সমস্ত কাজ আমি করছি তার দ্বারাই প্রমাণিত হচ্ছে যে আমি পিতারই প্রেরিত। প্রেরণ কর্তা পিতাই আমার সাক্ষী, যদিও তোমরা কোনদিন তাঁর কন্ঠস্বর শোননি না কখনও তাঁকে দেখনি। তাঁর বাণী তোমাদের অন্তরে স্থান পায়নি কারণ তাঁর প্রেরিত ব্যক্তিকে তোমরা বিশ্বাস কর নি। তোমরা অধ্যবসায় সহকারে শাস্ত্রপাঠ কর, মনে কর তার মধ্যেই পাবে অনন্ত জীবন। কিন্তু সেই শাস্ত্র আমারই সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছে। অথচ জীবন লাভের জন্য তোমরা আমার কাছে আসতে চাও না।
মানুষের দেওয়া গৌরবের প্রত্যাশী আমি নই। তোমাদের আমি চিনি। ঈশ্বর প্রেম তোমাদের অন্তরে নেই। আমি আমার পিতার দেওয়া অধিকার নিয়েই এসেছি, তোমরা আমাকে গ্রহণ করলে না। কিন্তু অন্য কেউ নিজের ক্ষমতায় যদি আসত তাহলে তোমরা তাকে গ্রহণ করতে। একমাত্র ঈশ্বরের কাছ থেকেই ক্ষমতা লাভ করা যায়। সেই ক্ষমতা লাভের চেষ্টা না করে যারা নিজেরাই পরস্পরের স্তুতিবাদে রত, তাদের তোমরা কি করে বিশ্বাস কর। এ কথা ভেবো না যে পিতার কাছে আমি তোমাদের নামে অভিযোগ করব। কিন্তু যাঁর উপরে তোমাদের ভরসা, সেই মোশিই তোমাদের অভিযুক্ত করবেন। মোশিকে যদি তোমরা বিশ্বাস করতে তাহলে আমাকেও বিশ্বাস করতে। কারণ শাস্ত্রে আমারই কথা তিনি লিখে গেছেন। তাঁর লিখিত বিধানে যদি তোমাদের আস্থা না থাকে তাহলে আমার কথাই বা তোমরা কি করে বিশ্বাস করবে?

Feti si যোহন 5